চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৫৯ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রশাসনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার পর চলমান আন্দোলন স্থগিত করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ও হলত্যাগের নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে চুয়েট প্রশাসন। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থীর প্রাণহানির জের ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী ২০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরর বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর উভয়পক্ষ থেকে এসব ঘোষণা এসেছে।
এদিকে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা চুয়েটের মূল ফটকের সামনে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন। এরপর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন- বন্ধের সিদ্ধান্ত মানছে না শিক্ষার্থীরা, চুয়েটে বিক্ষোভ চলছে
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালককে গ্রেফতারের দাবি পূরণ হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তহবিল গঠন করবে, যেখানে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, সব শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগিতা করবেন।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্ত করার কাজ দ্রুত শুরু হবে। এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন তারা। এসব দাবি পূরণ কিংবা আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাশেদ পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানানোর পর আগামীকাল (শুক্রবার) সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে। এতে হল ভ্যাকেন্ট (হলত্যাগের নির্দেশ) ও একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের আপাতত আবাসিক হলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন- আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে চুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে চুয়েটের পরীক্ষাসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ঘোষণার পর টানা চার দিন ধরে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহনের দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় উপাচার্য, সহউপাচার্য ও রেজিস্ট্রার প্রায় দুঘণ্টা ওই ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রশাসন। সেখান থেকে আপাতত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা এলো।
গত সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেলের আরোহী ছিলেন তিন চুয়েট শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থলেই শান্ত সাহা (২০) ও তৌফিক হোসেন (২১) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। শান্ত চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ও তৌফিক ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় জাকারিয়া হিমু আরেকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। ঘটনার পর সোমবার বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন-
- চুয়েটের ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু: বাসচালক গ্রেফতার
- চুয়েটের নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার পাবে ১৪ লাখ টাকা
- চট্টগ্রামে মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা, চুয়েটের ২ ছাত্র নিহত
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েট চুয়েট বন্ধ টপ নিউজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সড়ক দুর্ঘটনা সড়কে নিহত