জব্বারের বলিখেলা ২৫ এপ্রিল, জার্সি-ট্রফি উন্মোচন
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২০ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলিখেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে এই বলিখেলা।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বলিদের জার্সি এবং চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ ট্রফি উন্মোচন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
নগরীর লালদিঘির পাড়ে চসিক পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে মেয়র ঘোষণা দেন, আগামী প্রজন্ম যেন বলিখেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে, সে জন্য কুস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এ বলিখেলা আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। বলিখেলাকে ঘিরে তিন দিনের মেলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আসেন। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। সবার কাছে অনুরোধ, নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখে সেজন্য আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে।’
কুস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন ধরে বলিখেলায় অংশ নিচ্ছেন, কুস্তিগীর, রেফারি ও আয়োজক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি করা হোক। এবারের বলিখেলার পরেই এ বিষয়ে আয়োজকরা উদ্যোগ নেবেন। একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হবে। জায়গা আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেবো। এ জন্য যা যা সহযোগিতা দরকার, সিটি করপোরেশন ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে করা হবে।’
আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে জানান, প্রতিবছরের মতো বাংলা বর্ষের ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল লালদিঘির মাঠে বলিখেলা হবে। বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলিখেলার মঞ্চ (রিং) তৈরি করা হবে।
২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল মেলা চলবে। মেলা হবে মাঠের বাইরে। ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বলিখেলায় অংশগ্রহণার্থীদের নিবন্ধন শুরু হবে। যারা অংশ নেবেন, তাদের জন্য এবার আমরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বিক আয়োজনে সহযোগিতা দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
জহরলাল হাজারী বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়টাতে তাপপ্রবাহ থাকে। এবারও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা শরবত পানের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। চিকিৎসরাও বলছেন, যততত্র বিক্রি হওয়া শরবত যেন পান করা না হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেলায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে।’
বলিখেলায় অতিথি কারা থাকবেন— জানতে চাইলে জহরলাল হাজারী বলেন, ‘মেয়র মহোদয় দেশের বাইরে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ও রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে থাকবেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান আপাকে বলা হয়েছে। সিএমপি কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন।’
কমিটির সহসভাপতি সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার বলিখেলার ১১৫তম আসর বসছে। বলিখেলার পাশাপাশি তিন দিন ধরে মেলা চলবে। এবারের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে এনএইচটি হোল্ডিংস লিমিটেড। মেয়র মহোদয় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এবারের আয়োজন শেষেই যেন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।’
আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি শওকত আনোয়ার বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ক্রীড়া সংগঠক হাফিজুল ইসলাম, রেফারি আব্দুল মালেক, চসিক কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্তা, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ নজরুল ইসলাম ও মুহাম্মদ জামাল হোসেন এবং এনএইচটি হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বলিখেলা’ নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদিঘির মাঠে এই বলিখেলার সূচনা করেন তিনি।
সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর লালদিঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলিখেলা। বলিখেলার একদিন আগে-পরে তিন দিন ধরে লালদিঘির পারসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর