১০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার হতে পারে আইসিটি খাতে
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০০:১৬ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫১
ঢাকা: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে বৈশ্বিক ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এই খাতের সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে দেশের জনগণ ভাবতে শুরু করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এখন থেকেই স্মার্ট অবকাঠামো নির্মাণ, দেশের জনগণের ব্যবহারের উপযোগী নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কেবল ৫০ নয়, স্মার্ট বাংলাদেশে আইসিটি খাতের বাজার হতে পারে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির সপ্তক স্কয়ারে ‘আড্ডায় গল্পে স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। কাইজেন ও লুজলি কাপলড টেকনোলজিস যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী এক বছরের মধ্যেই দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলারের সরকারি প্রকল্পও আসতে পারে। এ বাজার ধরতে এখন থেকেই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি নিতে হবে। থাকতে হবে আইসিটি খাতের পর্যাপ্ত ডাটা। গড়ে তুলতে হবে স্মার্ট জনবলও।
অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে করা একটি গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। পরে তা নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বক্তারা। গল্প আড্ডা ও নানা প্রশ্নে উঠে আসে স্মার্ট বাংলাদেশের ভবিষ্যতের নানা দিক।
লুজলি কাপলড টেকনোলজিসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সৈয়দা নওশাদ জাহান প্রমির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে যৌথভাবে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন কাইজেনের সিইও দেবজিৎ সাহা ও লুজলি কাপলড টেকনোলজিসের সিইও ফিরোজ মুহাম্মাদ জাহিদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, এটুআইয়ের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (ইনোভেশন) মানিক মাহমুদ, আইডিয়া প্রকল্পের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও অপারেশন স্পেশালিস্ট সিদ্ধার্থ গোস্বামী, বেসিসের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান, অ্যাডভান্সড ইআরপি বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের পার্টনার তওসিফ ইশতিয়াক প্রমুখ।
স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, দেশের আইসিটি খাতের বাজার শুধু অভ্যন্তরীণ এটি ভাবলে ভুল হবে। আইসিটি খাতের বাজারকে বৈশ্বিকভাবে ভাবতে হবে। পুরো এই বাজারটি এখন প্রায় ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের। সেখানে বাংলাদেশের অংশ কত?
ড. আনোয়ার বলেন, আমার কী আছে, যা অন্যের নেই, সেটিই ব্র্যান্ড। আমাকে সেই জিনিসটিই বিক্রি করতে হবে। জনঘনত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। বিশ্বের কোনো দেশে এত মানুষ নেই। এই মানুষ বিবেচনায় আমরা যদি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করি, বিশ্বের প্রায় সব দেশের চেয়ে আমরা এগিয়ে থাকব। কারণ বিশ্বের সব দেশেই ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বাড়বে। অধিকসংখ্যক জনসংখ্যার জন্য কী প্রযুক্তি প্রয়োজন, কোন ধরনের প্রযুক্তি উপকারে আসতে পারে, আমরা এখন যা ভাবতে পারছি, যে সমস্যায় রয়েছি, বিশ্বের অন্যান্য দেশ তা অনেক পরে বুঝবে।
অ্যাডভান্সড ইআরপি বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, একাডেমি, ইন্ড্রাস্ট্রি ও সরকারের মধ্যে একটি গ্যাপ রয়েছে। এই তিনটিকে একত্রিত করতে হবে। সক্ষমতার জায়গায় আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। তবে বেসিসের কাছে কোনো ডাটা নেই। আমাদের সামর্থ্য কী, কে কোন খাতে কাজ করছি, তার ডাটা নেই। আমরা বিশ্বাস কেবল ৫০ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার হবে ১০০ বিলিয়ন ডলার। ভিশন ২০৪১ দেশের আইসিটি খাতের জন্য একটি আশীর্বাদ।
বেসিসের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন, আমাদের সার্ভে করতে হবে, তাই আমরা সার্ভে করছি। কিন্তু অনেক সময় সেই সার্ভে বেসিস সদস্যের কোনো কাজে আসে না। প্রকৃতপক্ষে কাজে লাগে এমন সার্ভে বেশি বেশি করে করতে হবে। ডাটা আমাদের অনেক প্রয়োজন। আমাদের ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে রিসার্চ ও ব্র্যান্ডিংয়ে। আমি নিজেও জানি না আমরা কীসে ভালো। আমরা অনেক কিছু করি, কোনটিতে ভালো, তা সঠিকভাবে না জানার কারণে দেশের আইসিটি খাত নিয়ে তেমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা যাচ্ছে না। ব্র্যান্ডিংয়ে আমাদের আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে।
বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের পার্টনার তওসিফ ইশতিয়াক বলেন, আমরা পাঁচ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মার্কেটের দিকে যাচ্ছি। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দেশে নতুন করে দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প আসতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে হেলথ কার্ড করা হবে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে এক থেকে দুটি করে বড় বড় প্রকল্প থাকবে। এটি দেশের আইসিটি খাতের জন্য একটি বড় সম্ভবনা।
লুজলি কাপলড টেকনোলজিসের সিইও ফিরোজ মুহাম্মাদ জাহিদুর রহমান বলেন, এখন দেশের সাধারণ মানুষ স্মার্ট বাংলাদেশ কী, তা বোঝার চেষ্টা করছে। স্মার্ট বাংলাদেশে সার্ভিস ব্যবহার করতে সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট করতে হবে, স্মার্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহার করতে হবে। স্মার্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহার করার জন্য সাধারণ মানুষকে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নিজেদের দেশের ব্যবহার উপযোগী নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। ২০৪১ সালে দেশের আইসিটি খাতের অভ্যন্তরীণ বাজার হবে ৫০ বিলিয়ন ডলারের। সেই কাজটি আমরা করতে পারব কি পারব না, তা এখনই বুঝতে হবে। ওই কাজ দেশের বাইরের লোকজন এসে করবে কি না, তাও ভাবতে হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
আইসিটি খাত কাইজেন টপ নিউজ লুজলি কাপলড লুজলি কাপলড টেকনোলজিস স্মার্ট বাংলাদেশ