‘উপজেলা নির্বাচন আরেকটা ভোটচুরির ভাঁওতাবাজি’
১৭ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১৪ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১১
ঢাকা: উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ‘ভোটচুরির ভাঁওতাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনটি ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।
আলোচনা সভায় প্রজাতন্ত্র দিবসের দাবি উপস্থাপন করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ওরা উপজেলা নির্বাচন দিয়েছে। যে দেশে ভোট নাই সেই দেশে ভোটে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নাই। যেখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নাই, যেখানে কোনো পার্টিসিপেশন নাই, সেখানে আবার কীসের ভোট?”
‘সুতরাং এই যে উপজেলা নির্বাচন দেশের মানুষকে আরেকটা ধাপ্পাবাজির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা ভোটের নামে ভাঁওতাবাজি। ভোট বলে কিছু নাই এই এ দেশে। একটা ভোটচুরি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আজকে তারা (সরকার) জিম্মি করে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজকে তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি আমাদের ঐক্য অটুট আছে, বিএনপির ঐক্য অটুট আছে। এই ঐক্য ভাঙার চেষ্টায় কোনো কিছু বাকি রাখে নাই। টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে ভয়ভীতি, জেল-জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতন সব কিছু করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা ধান ক্ষেতে ঘুমিয়েছে, বেড়ি বাঁধে ঘুমিয়েছে। কিন্তু নেতা-কর্মী কমপ্রোমাইজ করেনি, বিরোধী দলের নেতারা কেউ কমপ্রোমাইজ করেনি। আমরা ৩১ দফা ঐক্যবদ্ধভাবে দিয়েছি, এটা চলমান আন্দোলনের দফা অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সাম্য-মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এক হয়েছি। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমরা এই আন্দোলন চলমান আছে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘৯৫ শতাংশ মানুষ ওই নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। এবার সেই চিন্তা থেকে সরকার ভোটারদের আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে। এবার তারা চিন্তা করেছে যে, মানুষ নৌকাকে ভয় পায়, নৌকার কথা শুনলে বোধ হয় ভোট কেন্দ্রে যাবে না। সেজন্য নির্বাচনে তারা এবার দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারাই স্থানীয় সরকার আইন করেছে নৌকা দিয়ে অর্থাৎ দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার জন্য। আইনটা কিন্তু বাতিল করেনি। আইন রেখে তারা এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে না। কারণ, ওরা দেখছে বাংলাদেশের জনগণ নৌকা যেখানে আছে সেখানে নাই। তারা নৌকা বয়কট করেছে।’
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, যারা জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের এ দেশে বসবাস করা সম্ভব নয়। এই খুনীদের এই জুলুমবাজ, দখলদার সরকারকে বিতাড়িত না করতে পারলে এদেশ সাধারণ মানুষের বসবাস কঠিন হয়ে পড়বে।’
এই দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম এমন দৃশ্য এমন পরিবেশ দেখার জন্য নয়। গণতন্ত্র থাকবে না সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। আপনারা জেগে উঠুন। দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান। এই গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইকে এগিয়ে নিন, এদেরকে পরাজিত করুন।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মাত্র কত বছর বয়স ছিল রব ভাই বলতে পারবেন স্বাধীনতার পতাকা (একাত্তরের ২ মার্চ) দেখানো হয়েছে মানুষকে। এই পতাকা রক্ষা করবার জন্য লড়াই করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে। মানুষ যুদ্ধ করেছে এবং আমরা জিতেছিৃ কল্পনা মধ্যে ছিল কারও। এরকম হতে পারে ভাবতে পেরেছেন আগে। কিন্তু তা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজও মানুষের মধ্য বিক্ষোভের যে আগুন জ্বলছে, সেই আগুনকে ঠিক মতো গুছিয়ে সেটাকে একটা দাবানল তৈরি না করলে বিক্ষোভে আন্দোলনে রুপান্তরিত করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এটার জন্য কোনো হটকারী কর্মসূচির কথা আমি তো বলবই না। কারণ হঠকারী কোনোদিন গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হয় না, সফলতার দিকে নিয়ে যায় না। কিন্তু গঠনমূলকভাবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যত দেরি হবে তত আমাদের জন্য ক্ষতি হবে।’
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, কে এম জাবিরসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এজেড/এমও