বঙ্গাব্দকে বিদায় জানানোর দিন চৈত্র সংক্রান্তি আজ
১৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১২ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৬
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী মাসের শেষ দিনটিকে বলা হয় সংক্রান্তির দিন। চৈত্র মাসের সেই দিন তথা চৈত্র সংক্রান্তি আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল)। কেবল চৈত্র মাস তো নয়, চৈত্র সংক্রান্তি বঙ্গাব্দেরই শেষ দিন। নানা উৎসব, আয়োজন আর আনুষ্ঠানিকতায় পালন করা হবে দিনটি।
রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ, নতুন বঙ্গাবন্দ ১৪৩১-এর প্রথম দিন। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতির আগেই বছরকে বিদায় জানাতে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করে আসছেন এই ভূখণ্ডের মানুষরা।
ইতিহাসবিদ কারও কারও অভিমত, মানুষের শরীর ও প্রকৃতির মধ্যে যোগসূত্র ঘটায় চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজন। এ দিন ছাতু, চিড়া, দই, মুড়ি, খই, তিল ও নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি খাওয়ার প্রচলন ছিল। একই সঙ্গে প্রচলন ছিল বাড়ির আশপাশ থেকে কুড়িয়ে আনা শাক, মৌসুমি সবজি, পাতা ইত্যাদি খাওয়ার। বিশেষ করে দুপুরের খাবারে অন্তত একটি তিতা স্বাদের শাকসহ ১৪ রকমের শাক খাওয়া ছিল অন্যতম অনুষঙ্গ। সব শাকই হতে হতো অনাবাদী। মাছ-মাংস এ দিন বর্জন করা হতো। শাকান্ন নামে পরিচিত এই প্রথা এখনো অনেক এলাকায় পালন করা হয়ে থাকে।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস করে থাকেন। একসময় কেবল তারাই চৈত্র সংক্রান্তিতে বিভিন্ন আচার পালন করলেও পরে তা এই অঞ্চলের সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সম্মিলনে সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। বিশেষ করে চৈত্র শেষে গ্রীষ্মের খরতাপ থেকে বাঁচতে, শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বিশেষ করে গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে কৃষিকে সুরক্ষিত রাখতে বর্ষার দ্রুত আগমনের প্রার্থনায় চৈত্র সংক্রান্তির আচার সর্বজনীন হয়ে ওঠে।
চৈত্র সংক্রান্তি ঘিরে গ্রাম এলাকায় বিভিন্ন ধরনের মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। লাঠিখেলা, গান, সংযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান হয়। তবে চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। এটি গাজন উৎসবের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। এ উপলক্ষে গ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে অন্য গ্রামের শিবতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। একজন শিব ও একজন গৌরী সেজে নৃত্য করে এবং অন্য ভক্তরা নন্দি, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব সেজে শিব-গৌরীর সঙ্গে নেচে চলে।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীও চৈত্র সংক্রান্তি পালন করে থাকে নানা আয়োজনে। তাদের পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান চলে চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে বৈশাখের প্রথম কয়েক দিন পর্যন্ত। এর মধ্যে চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দুদিন ও নববর্ষের প্রথম দিন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা পালন করেন বিজু উৎসব, ত্রিপুরা সম্প্রদায় পালন করেন বৈসু উৎসব এবং মারমা সম্প্রদায় পালন করে সাংগ্রাই উৎসব।
বঙ্গাব্দের শেষ দিনে এসে কাটিয়ে ফেলা বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণের প্রত্যাশার দিন চৈত্র সংক্রান্তি। জরাজীর্ণতা কাটিয়ে সজীবতার পথে যাত্রার প্রত্যাশায় কাটুক চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজন।
সারাবাংলা/টিআর
চৈত্র সংক্রান্তি টপ নিউজ বঙ্গাব্দ বছরের শেষ দিন বর্ষ বিদায় বর্ষবরণ বাংলা নববর্ষ