Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্দুকের নলের মুখে ঈদের নামাজ, পরিবারের জন্য হাসিমুখে ছবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:০৩ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিকরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। জলদস্যুদের সশস্ত্র পাহারায় একসঙ্গে ২৩ নাবিক ঈদের নামাজ আদায়ের করলেও পর মুহূর্তেই তাদের আবার আলাদা করে ফেলা হয়েছে। ঈদের দিনেও বাসি বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে বলে নাবিকদের কয়েকজন তাদের পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন।

মুসলিম প্রধান দেশ সোমালিয়ায় বুধবার (১০ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। পাঁচ হাজার নটিক্যাল মাইলেরও বেশি দূরে সোমালিয়া উপকূলে জলদুস্যদের হাতে আটকে থাকা বাংলাদেশি নাবিকরা এদিন সকালে জাহাজের ব্রিজে নামাজ আদায় করেন। এর পর নাবিকদের কয়েকজন জলদস্যূদের নজর এড়িয়ে ফোনে দেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি প্রকাশ হয়ে গেলে নাবিকরা জলদস্যুদের ক্ষোভের শিকার হতে পারেন, এজন্য পরিবারের সদস্যরা নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

জিম্মি এক নাবিকের স্ত্রী সারাবাংলাকে জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি স্বামীর ফোনকল পান। নাবিক জানিয়েছেন, প্রথমে জলদস্যুরা তাদের ১০জন করে ঈদের নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু নাবিকরা সবাই অনুরোধ করেন, ঈদের কথা বিবেচনা করে তাদের যেন একসঙ্গে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। জলদস্যুরা প্রায় একঘণ্টা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর অনুমতি দেয়। এরপর সশস্ত্র প্রহরায় কেবিন থেকে বের করে জাহাজের ব্রিজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা নামাজ আদায় করেন।

তিনি বলেন, ‘তারা (নাবিক) যে ঈদের আনন্দ উদযাপন করছে এমন নয়। কোনোমতে নামাজটা আদায় করেছে। তারা যখন নামাজ পড়ছিল, চারদিকে জলদস্যুরা অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছিল। তাদের ঘেরাওয়ের মধ্যেই কোনোভাবে নামাজ আদায় করেছে। তাদের বাসি বিরিয়ানি খেতে দেওয়া হয়েছে। গতরাতে তাদের জন্য বিরিয়ানি রান্না হয়েছিল। সবাই খাওয়ার পর যেগুলো রয়ে গিয়েছিল, সেগুলোই সকালে নামাজের পর আবার খেতে দিয়েছে। নামাজের পর পরই তাদের সবাইকে ফের আলাদা করে রাখা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামাজ আদায়ের ছড়িয়ে পড়া ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চিফ অফিসার সাহেব উনার পারসোনাল ক্যামেরায় একটা ছবি তুলে হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়েছেন। জাস্ট একটা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। আমরা যাতে নিশ্চিত হই যে, উনারা ঈদের নামাজটা অন্তত পড়েছেন, সেজন্য পাঠিয়েছেন। সেটাও জলদস্যুদের অনেক অনুরোধ করে তুলেছেন। বিষয়টা এমন নয় যে, জলদস্যুরা তাদের সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করছে। এমনিতেই তাদের সবার মনটা খুব খারাপ। ঈদের দিনে তাদের বন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে, আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে।’

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জিম্মি নাবিকদের একটি ছবিতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে তারা নামাজ আদায় করেন। এরপর তারা আবার একসঙ্গে ছবি তোলেন। এ সময় তাদের কাউকে কাউকে প্রফুল্ল দেখা যায়, যেন ঈদের আনন্দে চাপা পড়েছে যাবতীয় অনিশ্চয়তা।

জিম্মি আরেক নাবিকের মা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে দুপুর ১২টার দিকে ফোন করেছিল। সবাই একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছে বলে জানিয়েছে। তারপর সামান্য একটু মিষ্টি জাতীয় কিছু সবাই মুখে দিয়েছে। তবে আমার ছেলে জানিয়েছে, সে খায়নি। অনেকদিন পর তার কথাবার্তায় খুব তাকে খুব নার্ভাস মনে হয়েছে। হয়তো, পরিবারের কথা মনে পড়ায় খারাপ লাগছে। মুখে বলছে, ভালো আছে। কিন্তু যতক্ষণ মুক্ত না হবে, ততক্ষণ তো আমরা বলতে পারব না ভালো আছে। আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে, আমাদের শরীরটা এখানে আছে, মনটা পড়ে আছে জাহাজে থাকা ছেলের কাছে।’

যত দ্রুতসম্ভব অক্ষত অবস্থায় যেন জিম্মিবস্থা থেকে মুক্তি পান এবং পরিবারের কাছে ফিরতে পারেন, নাবিকরা সেই প্রার্থনা করেছেন বলে জানান ওই মা।

এমভি আবদুল্লাহ নামে জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নাবিকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে, তারা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তারা ভালো আছেন। নাবিকদের মুক্ত করার বিষয়ে আমাদের আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের পরই আমরা নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে পারব। যে কোনো মুহূর্তেই তারা ছাড়া পেতে পারেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও জানিয়েছেন, আলোচনা চূড়ান্ত অগ্রগতির পর্যায়ে আছে, যে কোনোসময় নাবিকরা ছাড়া পাবেন। অন্যদিকে, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী চলতি মাসের মধ্যেই নাবিকদের মুক্ত করার আশা করছেন।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ঈদের নামাজ ছবি জলদস্যু টপ নিউজ সোমালিয়া

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর