Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুধু দরজায় তালা নয়, সিসি ক্যামেরা-অ্যালার্ম সিস্টেমও চায় সিএমপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদের ছুটিতে নগর ছেড়ে যাবার সময় চুরি মোকাবেলায় বাসার দরজায় অতিরিক্ত তালার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা-অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপনের জন্য বাসিন্দাদের পরামর্শ দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এর মধ্য দিয়ে সিএমপি চুরিসহ অপরাধ মোকাবেলায় নিজেদের প্রস্তুতির চেয়েও নগরবাসীর সচেতনতাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে আভাস মিলেছে।

নগর পুলিশ জানিয়েছে, ঈদ জামাত, আবাসিক এলাকা এবং দর্শনীয় স্থানগুলোকে ঘিরে ঈদের দিন থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সিএমপি নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এজন্য আলাদা-আলাদা তালিকা করা হয়েছে। থানা ও সিএমপির বিভিন্ন ইউনিটের নিয়মিত ফোর্সের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে নগরীর নিরাপত্তায়।

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, এবার নগরীতে মসজিদ ও ঈদগাহ মিলিয়ে ৭৭১টি স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানা এলাকায় ১১২টি, খুলশীতে ৫০টি, বায়েজিদ বোস্তামিতে ৫০টি ও পাঁচলাইশে ২০টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

কোতোয়ালীতে ৭৩টি, বাকলিয়ায় ৩৪টি, চকবাজারে ২৩টি ও সদরঘাটে ৪৪টি, ডবলমুরিংয়ে ১৩টি, হালিশহরে ৭৩টি, পাহাড়তলীতে ৩০টি, আকবর শাহ থানা এলাকায় ৫৪টি স্থানে ঈদ জামাত হবে। এছাড়া ইপিজেড থানা এলাকায় ২৬টি, বন্দরে ৩৯টি, পতেঙ্গায় ৬০টি এবং কর্ণফুলী থানা এলাকায় ৭০টি স্থানে ঈদ জামাত হবে।

তবে পুলিশ নগরীর দুটি মূল স্থান যেখানে কয়েকটি জামাত মিলিয়ে লাখো মুসল্লীর সমাগম ঘটে, সেগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাধানে প্রধান জামাত জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দান ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ।

বিজ্ঞাপন

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-অপারেশন) মো. জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে তিনটি গেইট ও চারটি আর্চওয়ে থাকবে। ২০ জনের টিম ভাগ হয়ে সেখানে দায়িত্ব পালন করবে। থানার নিয়মিত মোবাইল টিমের পাশাপাশি একটি অতিরিক্ত থাকবে। এছাড়া পুরো মাঠ ঘিরে অতিরিক্ত ফোর্স দিয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি তো থাকবেই। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদেও একই ব্যবস্থা থাকবে। দুটি বড় জামাতকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় একাধিক চেকপোস্ট বসানো হবে।’

থানাভিত্তিক ঈদ জামাতগুলোকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি নগর পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম টহল দেবে বলে জাহাঙ্গীর জানান।

জানা গেছে, ঈদ জামাতের পর নগর পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে আছে আবাসিক এলাকাগুলো। নগরীতে মোট ১৬৩টি আবাসিক এলাকার তালিকা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কোতোয়ালী থানা এলাকায় ১৩টি, বাকলিয়ায় ৫টি, চকবাজারে ৮টি, সদরঘাটে ৪টি, চান্দগাঁওয়ে ৮টি, পাঁচলাইশে ২৮টি, খুলশীতে ২০টি, বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায় ১২টি, ডবলমুরিংয়ে ১০টি, হালিশহরে ১৭টি, পাহাড়তলীতে ৭টি, আকবর শাহ থানা এলাকায় ১৬টি, বন্দরে ৩টি, ইপিজেড এলাকায় ২টি, পতেঙ্গায় ৭টি এবং কর্ণফুলীতে ৩টি।

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) স্পিনা রাণী প্রামাণিক জানিয়েছেন, ছুটিতে অধিকাংশ বাসিন্দাই গ্রামের বাড়িতে কিংবা নিজেদের পছন্দের স্থানে ঈদ উদযাপনে চট্টগ্রাম নগরী ছেড়ে যাবেন। এতে আবাসিক এলাকাগুলো প্রায় পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা এলাকায় বাসাবাড়িতে চুরি ঠেকাতে নগরবাসীর জন্য সিএমপি সাত দফা পরামর্শ দিয়েছে।

ফাঁকা বাসার নিরাপত্তায় পুলিশের পরামর্শের মধ্যে আছে, বাসা-বাড়ির দরজায় অতিরিক্ত তালা লাগানো, প্রতিরোধমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া, যেমন- সিসি ক্যামেরা ও অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন। নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ফাঁকা বাসায় রেখে না যাওয়ার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

এছাড়া আবাসিক এলাকায় রাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া, নতুন নিরাপত্তা কর্মীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ছবি সংরক্ষণ করা, সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি ঘোরাফেরা করলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় থানাকে অবহিত করা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি সংক্রান্ত যে কোনো ঘটনা দ্রুত ৯৯৯-এ অবহিত করা।

আবাসিক এলাকার নিরাপত্তার জন্য নগরীর ১৬ থানার প্রতিটিকে গুরুত্বভেদে এক বা একাধিক মোবাইল টিম দেয়া হচ্ছে, যারা ঈদের দিন থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত গাড়িতে চড়ে সার্বক্ষণিক টহল দেবে বলে জানান এডিসি-অপারেশন জাহাঙ্গীর।

এদিকে নগরীর ১৩টি দর্শনীয় স্থানেও ঈদের দিন থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমপি। এসব স্থান হল- কোতোয়ালী থানা এলাকায় নেভাল-টু, সিআরবি ও ডিসি হিল, বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতু, চান্দগাঁওয়ে স্বাধীনতা পার্ক, ডবলমুরিংয়ে আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক ও শিশুপার্ক, পাহাড়তলীতে সাগরতীরে নিঝুম পার্ক, আকবর শাহ থানা এলাকায় ফয়’সলেক কনকর্ড পার্ক, বন্দরে আনন্দবাজার বেড়িবাঁধ এবং পতেঙ্গায় সমুদ্র সৈকত, নেভাল এবং বাটারফ্লাই পার্ক।

সিএমপির এডিসি-অপারেশন মো. জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দর্শনীয় স্থানগুলোর কয়েকটিতে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন বেড়াতে আসেন। লোক সমাগমের অতীত রেকর্ড বিবেচনায় রেখে ৫ থেকে ১২ জন পর্যন্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। এগুলো থানার নিয়মিত সদস্যের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে মোতায়েন থাকবে। এছাড়া টহল টিম, সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা টিম তো থাকবেই।’

রিজার্ভ ফোর্স থেকে ৪০০ অতিরিক্ত সদস্য ঈদ দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘থানার নিয়মিত সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর আরও ৪০০ সদস্য তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। সোয়াত, বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, ডিগ স্কোয়াড কে-নাইন স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ডিবির টিমসহ অন্যান্য ইউনিট তো আছেই।’

ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায়ও নগর পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা নির্দেশনা এসেছে। এর মধ্যে আছে- ব্যাংক বা যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিজস্ব নিরাপত্তা অধিকতর জোরদার করা, ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা যাতে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করে, সে বিষয় তদারক করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে নিযুক্ত করা, ব্যাংকের ভল্টের চারপাশে সিসি ক্যামেরা রাখা, সেগুলো সার্বক্ষণিক সক্রিয় আছে কি না যাচাই করা ও সন্দেহজনক কোনো বিষয় নজরে এলে পুলিশকে অবহিত করা এবং ব্যাংকের সিসি ক্যামেরাগুলো সক্রিয় আছে কি না নিশ্চিত করা।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ সিএমপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর