‘আলোচনার পাশাপাশি জলদস্যুদের ওপর চাপও অব্যাহত আছে’
৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৬ | আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশি জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করা সোমালিয়ার জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি নানামুখী চাপও অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর পাড়ে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন মন্ত্রী।
নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা হাইজ্যাক করেছে, তাদের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। নাবিকরা ভালো আছে। তাদের খাবারের কোনো অসুবিধা নেই, তারা কেবিনে আছে। যেহেতু আলোচনা অনেকদুর এগিয়েছে, আমরা আশা করছি সহসা তাদের মুক্ত করা সম্ভব হবে।’
‘সেই জাহাজের আশেপাশে বিদেশি জাহাজও প্রস্তুত আছে। আলোচনার পাশাপাশি হাইজ্যাকারদের ওপর নানামুখী চাপও রয়েছে। আমরা আশা করছি, সহসা জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হবে। তবে দিনক্ষণ বলা সম্ভব নয়।’
নাবিকদের ঈদের আগে ফেরত আনার জন্য স্বজনদের আবেদনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জাহাজে যারা চাকরি করে, ঈদের আগে-পরে হিসেব করে তাদের কোনো ছুটি হয় না। তারা যায় ছয় মাস কিংবা এক বছরের জন্য। এই জাহাজ যদি হাইজ্যাক না-ও হতো, তাদের ঈদের আগে জাহাজ ছেড়ে পরিবারের সাথে মিলিত হবার কথা ছিল না।’
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে জাহাজটিকে ২৩ নাবিকসহ দখলে নেয়। জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাচ্ছিল। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন।
জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে এখন সোমালিয়ার উপকূলে নোঙ্গর করে রেখেছে জলদস্যুরা। জিম্মি করার পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে তাদের পরিবার ও মালিকপক্ষে কয়েকদফা যোগাযোগ হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, জলদস্যুরা তাদের কোনো ধরনের চাপ কিংবা নির্যাতন না করলেও তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। দ্রুততার সঙ্গে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির আকুতিও জানান তারা।
জাহাজটি দখলে নেওয়ার নয়দিনের মাথায় গত ২০ মার্চ জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মালিকপক্ষের। এরপর থেকে নাবিকদের মুক্ত করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
কেএসআরএম গ্রুপের মোট ২৩টি জাহাজ আছে, যেগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করছে। ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ‘এমভি আবদুল্লাহ’ গত বছর কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানায় আসে।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের উপকূলে আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ