কালবৈশাখির সঙ্গে শিলাবৃষ্টি, সিলেট-সুনামগঞ্জে ফসলের ক্ষতির শঙ্কা
১ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৩১ | আপডেট: ২ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৩৩
সিলেট: প্রবল কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে নাকাল হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। বড় বড় শিলার আঘাতে অনেক বাসাবাড়ির জানালার কাচ ভেঙেছে, ভেঙেছে সড়কে থাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাড়ির কাচও।
ঝড়ে গাছ ভেঙে এক অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে সুনামগঞ্জ থেকে। সিলেটে শিলার আঘাতে একজনকে হাসপাতালে ভর্তির খবরও মিলেছে। সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা বাড়িঘর। কৃষকরা শিলায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
রোববার (৩১ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার কিছু পর শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টির এই তাণ্ডব। ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী হয় ঝড়। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ মিনিট ধরে চলে শিলাবৃষ্টি। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের অনেকেই এর আগে কখনো এত বড় বড় শিলা পড়তে দেখেননি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, বছরের এ সময়ে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি হয়ে থাকে। একে কালবৈশাখী বলা হয়। অনেক সময় কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জে সেটিই হয়েছে।
সিলেটে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হতেই সড়কে আটকা পড়েন অনেকে। সবাই নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বড় বড় শিলা পড়তে শুরু করলে অনেকেই আহত হয়েছেন। সড়কে থাকা বেশকিছু অটোরিকশা ও গাড়ির কাচ ভেঙেছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলীর বাসিন্দা বিল্লাল আহমেদ (৪০) শিলা পড়ে আহত হলে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
সিলেটের টিলাগড়ের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান ও রায়নগরের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন বলেন, এর আগেও তারা শিলাবৃষ্টি দেখেছেন। তবে এত বড় বড় শিল পড়তে কখনো দেখেননি। পুরো শহরেই শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে তারা জেনেছেন। শিলার আঘাতে অনেকের বাসাবাড়িতেই ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জেও রাত সোয়া ১০টার পরপরই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ছিল বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এ সময় কালীবাড়ি এলাকায় একটি চলন্ত অটোরিকশার ওপর গাছ ভেঙে পড়লে চালক ও তিন নারীসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নিরুপম রায় চৌধুরী বলেন, আহত অবস্থায় পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চালক রুয়েলকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর আহত সাদ্দামের অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এম এ জি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পরে রাত সোয়া ১১টার দিকেও ফের ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। তবে এবারে ঝড়-বৃষ্টির তীব্রতা আগের চেয়ে কম ছিল। কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিলাবৃষ্টিতে হাওরে আগাম জাতের ধানের আবাদে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে কয়েকটি টিনশেড দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ইকবাল নগর এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে বলেও জানিয়েছেন স্থানয়ীরা।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন, ঝড়-বৃষ্টিতে বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঝড়ে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষিতে প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ঝড় ও মাঝারি শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে হাওরের কিছু আগাম ধানের জাতের ক্ষতি হতে পারে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।
সারাবাংলা/টিআর