বেইজিংকে হটিয়ে এশিয়ার ‘বিলিয়নারদের রাজধানী’ মুম্বাই
২৭ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫২ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ২২:১১
এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বিলিয়নারের বসবাস এখন ভারতের মুম্বাই শহরে। তাই শহরটি ‘এশিয়ার বিলিয়নারদের রাজধানী’ তকমা অর্জন করেছে। আগে এই খ্যাতি ছিল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের।
হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক ধনীদের তালিকা অনুযায়ী মুম্বাই এখন এশিয়ার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিলিয়নার নিয়ে এই মহাদেশের ধনীদের রাজধানী। এই প্রথম ভারতের কোনো শহর এশিয়ার বিলিয়নারদের শীর্ষ বসবাসস্থলের খ্যাতি লাভ করেছে।
হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে বিলিয়নার তিন হাজার ২৭৯ জন। ২০২৩ সাল থেকে এ বছর বিলিয়নার বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নার ১১৯ জনের বাস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ৯৭ জন। তিন নম্বরে মুম্বাইয়ের স্থান। ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাইয়ে বাস করেন ৯২ জন বিলিয়নার। আর বেইজিংয়ে বাস ৯১ জনের। চীনের সাংহাইয়ে আছেন ৮৭ জন বিলিয়নার।
শহর হিসেবে এশিয়ায় বেইজিং প্রথম স্থান হারালেও দেশ হিসেবে বিশ্বে এক নম্বরেই আছে চীন। দেশের র্যাংকিংয়ে শীর্ষ অবস্থানে থাকা চীনের বিলিয়নার ৮১৪ জন। গত এক বছরে চীনে বিলিয়নার কমেছে ১৫৫ জন। তা সত্ত্বেও দেশটি শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়নার বেড়েছে ১০৯ জন। দেশ হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিলিয়নার ৮০০ জন যুক্তরাষ্ট্রের। আর তিন নম্বরে ভারতে বিলিয়নার আছেন ২৭১ জন। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে বিলিয়নার বাস করেন যথাক্রমে ১৪৬ ও ১৪০ জন।
গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের জন্য একটি খারাপ বছর ছিল ২০২৩। গত কয়েক বছরে চীনে সম্পদ সৃষ্টির ধারা গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। রিয়েল এস্টেট এবং নবায়নযোগ্য শিল্প থেকে বিলিয়নারদের সম্পদ অর্জনের পরিমাণ কমে গেছে।
বোতলজাত পানির কোম্পানি নংফু স্প্রিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ঝং শানশান চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে এ বছরও তার স্থান ধরে রেখেছেন। ই-কমার্স কোম্পানি পিনদুওদুওর প্রতিষ্ঠাতা কলিন হুয়াং টেনসেন্টের প্রধান নির্বাহী মা হুয়াটেংকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন।
হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নার ক্লাবে ১০৯ জন যুক্ত হয়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতি-ধনী ব্যক্তিদের সম্পদবৃদ্ধির পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, ওরাকল এবং মেটার মতো কোম্পানির নতুন নতুন এআই পণ্যের উপর বিনিয়োগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিইও ও মালিকদের সম্পদ বেড়েছে।
ব্লুমবার্গের বিলিয়নার ইনডেক্স অনুযায়ী, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং টেসলার সিইও এলন মাস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দুই ধনী ব্যক্তি। তাদের সম্পদ যথাক্রমে ২০১ বিলিয়ন ও ১৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।
মার্চে ইরাস ট্যুরের কারণে মার্কিন সংগীতশিল্পী টেইলর সুইফটের সম্পদ বেড়েছে। হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এবারের বিলিয়নার তালিকায় তিনি স্থান পেয়েছেন তিনি। তার সম্পদের পরিমাণ এখন ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টেইলর সুইফট অর্ধেকেরও বেশি অর্থ আয় করেছেন রয়্যালটি এবং কনসার্ট থেকে। ইরাস ট্যুরের প্রথম দফায় তিনি আয় করেছেন ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া কনসার্ট ফিল্ম থেকে আয় করেছেন আরও ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি অর্থ উপার্জন করেছেন, গানগুলো বিক্রি করে। বিশেষ করে তার প্রথম ছয়টি অ্যালবাম ২০২০ সালে শ্যামরক ক্যাপিটালের কাছে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে গত বছর সবচেয়ে বেশি বিলিয়নার বেড়েছে ভারতে ৮৪ জন। অক্টোবর-ডিসেম্বরে দেশটিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে দেশটি এখন বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি। তাই সেদেশে সম্পদশালী ব্যক্তিদের সম্পদ আরও বাড়ছে। ডিসেম্বরে ভারতের স্টক মার্কেট হংকংকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম স্থান দখল করেছে। এখন ভারতের স্টক মার্কেটের মূল্য ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
ব্লুমবার্গের সূচক অনুযায়ী, ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। বিশ্বের ১১তম ধনী তিনি। তার মোট সম্পদ ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।
এ বছরের জানুয়ারিতে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান গৌতম আদানি কিছু দিনের জন্য আম্বানিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবার তার সম্পদ কিছুটা কমেছে। গৌতম আদানির সম্পদ এখন ৯৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সারাবাংলা/আইই