Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবহেলায় শিশু রাইফার মৃত্যু: ৪ ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ মার্চ ২০২৪ ২০:৪২ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪ ০০:০৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রায় ছয় বছর আগে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাংবাদিকের শিশুকন্যার মৃত্যুর ঘটনায় চার চিকিৎসকের অবহেলার সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই চার চিকিৎসককে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে সংস্থাটি।

সোমবার (২৫ মার্চ) পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্রটি জমা দেন।

বিজ্ঞাপন

অভিযুক্ত চার চিকিৎসক হলেন- নগরীর মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী ও ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত এবং হাসপাতালের তৎকালীন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শুভ্র দেব।

পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমস্ত নথিপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাইবাছাই করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, শিশুটির মৃত্যুতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অবহেলা ছিল। শিশুটির চিকিৎসায় মোট চারজন চিকিৎসক যুক্ত ছিলেন। তারা কেউই অবহেলাজনিত মৃত্যুর দায় এড়াতে পারেন না। এজন্য তাদের আসামি করে অভিযোগপত্র প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছি। ধার্য্য তারিখে সেটি আদালতে জমা হবে এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হবে।’

দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ও ১০৯ ধারায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা।

গলায় ব্যাথা চিকিৎসার জন্য ২০১৮ সালের ২৮ জুন বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাংবাদিক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাফিদা খান রাইফাকে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বিধান রায়ের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মৃত্যু হয় তার।

বিজ্ঞাপন

আকস্মিক শিশুটির মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েন রাইফার বাবা-মা। শুরু থেকেই তারা অভিযোগ করে আসছিলেন, ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলো বিচার চেয়ে রাস্তায় নামে। চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও (বিএমএ) পাল্টা কর্মসূচি শুরু করে। চিকিৎসকেরা রোগীদের সেবা দেয়া বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ওই বছরেরই ১৮ জুলাই চকবাজার থানায় হাসপাতালের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন সাংবাদিক রুবেল খান। দুইদিন পর ২০ জুলাই পুলিশ সেটা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। মামলায় ওই চার চিকিৎসককেই আসামি করা হয়। এজাহারে রুবেল খান অভিযোগ করেন, চার চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতিতে রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় না হওয়া এবং ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও অতিরিক্ত মাত্রায় সেডিল প্রয়োগের কারণে তার আড়াই বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে র‌্যাব ও ‍ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর যৌথভাবে ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযানও চালায়। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একদিনের চিকিৎসক ধর্মঘট পালিত হয়। এছাড়া রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে।

সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তদন্তে ভুল চিকিৎসার প্রমাণ না পেলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায়। তদন্ত প্রতিবেদনে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এই কমিটি। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের বিভিন্ন ত্রুটির কথা তুলে ধরে।

এসব ঘটনার মধ্যেই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। পাঁচ বছরেরও বেশিসময় ধরে তদন্তের পর অবশেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে চার চিকিৎসককে আসামি করে, যারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ রাইফা খান শিশু রাইফা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর