পাহাড়তলী বধ্যভূমি সম্প্রসারণে কাজ শুরুর আশ্বাস মেয়রের
২৫ মার্চ ২০২৪ ১৭:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ভূমিখেকোদের দখলে থাকা পাহাড়তলী বধ্যভূমির জায়গা সম্প্রসারণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে শহিদ স্মৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
ভূমিখেকোরাই পাহাড়তলী বধ্যভূমির জায়গা সংকুচিত করেছে জানিয়ে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, ‘হীনস্বার্থে ভূমিখেকোরা জায়গা দখল করতে করতে পাহাড়তলী বধ্যভূমিকে সংকুচিত করে ফেলেছে, যা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে ব্যথিত করে। এজন্য বধ্যভূমি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে বধ্যভূমির ডিজাইন ও এস্টিমেশন শেষ হয়েছে। শিগগিরই বধ্যভূমি পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
এ সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ পাহাড়তলী বধ্যভূমির যে এলাকা বেদখল হয়ে গেছে, তা উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
চুয়েটে গণহত্যা দিবসের অনুষ্ঠান
গণহত্যা দিবসে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ে (চুয়েট) গণহত্যা ও ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক স্মৃতিচারণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় চুয়েটের ভিসি রফিকুল আলম বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পরে স্বাধীনতার নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস চেপে রেখেছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেন। ২০০৯ সাল থেকে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরে সেটাকে তিনি একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসেন।’
বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে উল্লেখ করে রফিকুল আলম বলেন, ‘১৯৭১ সালের সেই ভয়াল দিনগুলোতে চুয়েট ক্যাম্পাসও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে স্নাত হয়েছিল। চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী শহিদ মোহাম্মদ শাহ এবং শহিদ তারেক হুদাসহ এই অঞ্চলের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রজন্মকে দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সেই ত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মিশনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও উপপরিচালক (জনসংযোগ) ফজলুর রহমান ও উপাচার্য কার্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) রাশেদুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য জামাল উদ্দীন আহম্মদ, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন সুদীপ কুমার পাল, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন রাশিদুল হাসান, পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আয়শা আখতার, আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম, রুবেল মাহমুদ, আব্দুর আল হান্নান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন উর রশিদ।
জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয়ের উদ্যেগে গণহত্যা দিবসের আলোচনা
এদিন গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয়ের উদ্যেগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আগে মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালি জাতির আন্দোলনে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পশ্চিমা হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অসংখ্য সামরিক ও বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে। পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করে।বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক ভয়ানক রাত ২৫ মার্চ। এ রক্তের শপথ নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালি বাঘের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পশ্চিমা হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদর আল শামসের ওপরে। বাঙালি জীবন বাজি রেখে লড়াই করে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করার জন্য ৭১’র পরাজিত শত্রুরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আজ এ দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে, কোনো অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং গণতন্ত্র বিদ্বেষী মৌলবাদের আশ্রয়দাতাদের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলার অতিরিক্ত পিপি আজাহারুল হক, মাসুদ রহমান বাবলু, সহকারী পিপি জাহেদুল ইসলাম, কাদের আলী শাহ আরমান, আফজাল হোসেন, অভিজিৎ ঘোষ ও সেলিম চৌধুরী।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম