Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পানি দিবসে উপকূলের নারীদের খালি কলস নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২২ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩০ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫৯

ঢাকা: উপকূলে লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবিতে খালি কলস নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচি থেকে উপকূলের নারীদের দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহের ভোগান্তি দূর করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

শুক্রবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব পানি দিবস-২০২৪ উপলক্ষে নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত খালি কলসি হাতে নারীদের অবস্থান কর্মসূচিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী নারীরা জানান, পানি নিয়ে উপকূলবাসীর দূর্ভোগের সীমা নেই। চারদিক লবণ পানি দ্বারা বেষ্টিত। উপকূলের নারীদের অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। দস্তার কলসে দূর থেকে এই পানি সংগ্রহ করার ফলে তাদেরকে সারাবছর কোমরে ব্যাথা, মাজার হাড় ক্ষয়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যাসহ অনেক রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়।

এছাড়া অনেক সময় মেয়েদের ইভটিজিং ও নানাধরণের লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। তাই পান করার উপযোগী না হলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে এলাকার অনেকে লবণ পানি পান করে থাকে। ফলে তাদের নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে ভুগতে হয়। এর মধ্যে নারী ও শিশুরা বেশি সমস্যায় ভোগে।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নেতারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরপর লবণাক্ততার আগ্রাসনে এই সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে উপকূলের জীবন-জীবিকা ও প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। এই হুমকি মোকাবেলায় লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা জরুরি।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশ আন্দোলনের নেতা শরীফ জামিল বলেন, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলে পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরপর লবণাক্ত পানিতে চিংড়ি চাষের কারণে মিঠাপানির পুকুরগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আর সময়ে-অসময়ে লবণাক্ত পানি ফসলি জমিতে প্রবেশ করায় জমিতে ফসল হচ্ছে না। তাই জীবন-জীবিকা রক্ষায় উপকূলের বসতি ও ফসলি এলাকায় লবণ পানি বন্ধ করতে হবে।

শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, অতিরিক্তি লবণাক্ত পানি গ্রহণের ফলে নারীদের জরায়ুতে বিভিন্ন রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশু জন্ম দেওয়ার হার বেড়েছে। যে কারণে উপকূলীয় এলাকায় বাল্যবিয়ে বাড়ছে। আবার রোগে আক্রান্ত হয়ে জরায়ু কেটে ফেলার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে। তাই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে উপকূলে লবণ পানির আগ্রাসন বন্ধ ও সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, পানি আইনের ধারা-১৭ অনুযায়ী উপকুলীয় অঞ্চলকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। মিঠা পানির উৎস ভরাট ও দূষণ করে এমন যে কোন ব্যক্তিগত বা শিল্প উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে। নিরাপদ পানির সর্বজনীন, ন্যায্য ও সজলভ্যতা নিশ্চিত করতে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। জলবায়ু ঝুঁকি, দারিদ্র্য ও বিপদাপন্নতার মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে উপকূল সংশ্লিষ্ট উপজেলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (বিশেষ করে নগদ ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি) আওতা ও পরিধি বাড়াতে হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সাধনে উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরও বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা আলমগীর রতন, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দিন, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের ব্যবস্থাপক মো. হেলাল উদ্দিন, ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন, ঢাকাস্থ পাইকগাছা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ইঞ্জিনিয়ার তুহীন পারভেজ, সাবেক ছাত্র নেতা মৃত্যুঞ্জয় দাশ।

সারাবাংলা/আরএফ/এনইউ

উপকূল খালি কলস নারী পানি দিবস

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর