বরকলে প্রাণঘাতী সেই রোগ এখনো অজ্ঞাত, আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে
২১ মার্চ ২০২৪ ২১:৪১ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ১১:২৭
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের দুর্গম চান্দবীঘাট পাড়ায় ‘অজ্ঞাত রোগে’ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক দল। গ্রামে গ্রামে ঘুরে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ওই রোগ নিয়ে আতঙ্ক কমে এসেছে। তবে এখনো ওই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকাল ১১টা দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের ছয় সদস্যের চিকিৎসক দলটি চান্দবীঘাট পাড়ায় পৌঁছায়। পরে সেখান থেকে তিন ভাগে ভাগ হয়ে গ্রামের আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন তারা। এ দিন ১২ জনকে তারা চিকিৎসা দিয়েছেন।
চান্দবীঘাট পাড়ার কারবারি (গ্রামপ্রধান) শিব রতন চাকমা বলেন, চিকিৎসকদের দলটি পৌঁছানোর পর গ্রামের মানুষদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। গ্রামবাসী তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- বরকলে ‘অজ্ঞাত রোগে’ ৫ জনের মৃত্যু, মেডিকেল টিম যাচ্ছে সন্ধ্যায়
ভূষণছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওর্য়াডের ইউপি সদস্য প্রীতিশংকর দেওয়ান বলেন, মেডিকেল টিম এখানে আসার পর ভাগ হয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেছে। এতে গ্রামের মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল, সেটা অনেক কমে গেছে। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত রোগীরা এতদিন গ্রামের কবিরাজি চিকিৎসা নিলেও আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে তারা মেডিকেল টিমের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চান্দবীঘাট পাড়ায় ছয় সদস্যের যে চিকিৎসক দল কাজ করছে তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং মারমা সাগর। তিনি বলেন, ‘পায়ে হেঁটে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামে পৌঁছে আমরা তিন ভাগে ভাগ হয়ে রোগীদের ঘরে ঘরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেছি। পরিস্থিতি বুঝে আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব।’ তবে অজ্ঞাত সেই রোগ সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য দেননি তিনি।
মেডিকেল টিমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানান রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী। তিনি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে আমাদের মেডিকেল টিম সেখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেকাজ শুরু করে দিয়েছে। পুরো গ্রমের ঘরে ঘরে গিয়ে সবাইকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। ওষুধপত্র যা লাগতে পারে, সেগুলোও যথাসম্ভব পাঠানো হয়েছে টিমের সঙ্গে।’
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়নের ১৪৯ নম্বর গুইছড়ি মৌজার চান্দবীঘাট পাড়ায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় জানুয়ারিতে। স্থানীয়রা জানান, শরীরে গঠাৎ করে তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া, তীব্র তাপমাত্রায় জ্বর আসা, বমি বমি ভাব হওয়া ও কারও কারও রক্তবমির মতো উপসর্গ দেখা এই রোগে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি একজনের মৃত্যুও হয়।
ওই সময় ঘটনাটি সবার অগোচরেই ছিল। তবে একই ধরনের উপসর্গে আরও অনেকেই আক্রান্ত হতে থাকেন। সর্বশেষ তথ্য বলছে, ১০ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে একই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। ওই এলাকায় আরও ১২ জন উপসর্গগুলো নিয়ে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হওয়ায় এতদিন ‘অজ্ঞাত’ এই রোগে আক্রান্তরা কবিরাজদের কাছ থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। বৃহস্পতিবারই প্রথম তারা চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা পেলেন।
রোগটি সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য না দিতে পারলেও সিভিল সার্জন আগেই জানিয়েছিলেন, এটি খাদ্যে বিষয়ক্রিয়া বা খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত কোনো অসুস্থতা হতে পারে। আপাতত আক্রান্তদের চিকিৎসায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন আর কারও প্রাণহানি না ঘটে। এখন যেহেতু সবাই চিকিৎসার আওতায় চলে এসেছে, আশা করি আর বড় ধরনের কোনো অসুবিধা হবে না।’
সারাবাংলা/টিআর
অজ্ঞাত রোগ অজ্ঞাত রোগে মৃত্যু টপ নিউজ বরকল উপজেলা মেডিকেল টিম রাঙ্গামাটি