Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

জবি করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২৪ ০০:৩৯ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৬

সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। ছবি: ফেসবুক

কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার কিছু সময় আগেই ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরকে তার ‘মৃত্যু’র জন্য দায়ী করেছেন।

গলায় ফাঁস দেওয়া ওই জবি শিক্ষার্থীর নাম ফাইরুজ অবন্তিকা। তিনি জবি আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ফাইরুজ অবন্তিকা তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। এরপরই তিনি কুমিল্লার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখা ‘সুইসাইড নোটে’ ফাইরুজ তার নিজের মৃত্যুর জন্য আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন। ফাইরুজের এক শিক্ষাবর্ষ বিরতি থাকায় তিনি আম্মানের সহপাঠী ছিলেন। আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে তিনি যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করা ও হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি ও মানহানির অভিযোগ করেছেন।

ফেসবুক পোস্টে ফাইরুজ অবন্তিকা লিখেছেন, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্ট দেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন-অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখত, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখান। বলেন, আম্মানের হয়ে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।

বিজ্ঞাপন

ফাইরুজ লিখেছেন, আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাব না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে যৌন হয়রানিমূলক (সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিভ) কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতি তুলে হেয় করে গালিগালাজ করেন। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও তিনি এখনো আমাকে বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে আমাকে নানাভাবে মানহানি করছেন।

ফেসবুক পোস্টে ফাইরুজ অভিযোগ করেছেন, এই লোক (সহকারী প্রক্টর) আমাকে আম্মানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাত বার প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে বলেছেন, ‘(গালি), তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেন? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি, তোরে এখন কে বাঁচাবে?’… কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া, আর সে কি না শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না! আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে বিচার চাইলাম, আপনি এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক।

গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন উল্লেখ করে ফাইরুজ লিখেন, এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যেন মৃত্যু ছাড়া আমার কোনো গতি না থাকে। তবু আমি লড়াই (ফাইট) করার চেষ্টা করেছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উপাচার্যের নির্দেশে এরই মধ্যে দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য প্রশাসনিক টিম গঠন করার কাজ করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত আম্মান সিদ্দিকী ও দ্বীন ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/টিআর

আত্মহত্যা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা টপ নিউজ ফাইরুজ অবন্তিকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর