মুন্সীগঞ্জ দিয়ে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে কয়েক শ মণ জাটকা
১২ মার্চ ২০২৪ ২০:১৩ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ২৩:০৮
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার হচ্ছে কয়েকশ মণ জাটকা ইলিশ। সম্প্রতি ১২০০ কেজি জাটকাসহ একটি পিকআপ জব্দ করলে জাটকা বিক্রির চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসছে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জ উপজেলার বেশনাল মোড়ে থেকে জাটকাগুলো জব্দ করা হয়।
প্রতিদিন মুন্সীগঞ্জের পদ্মা-মেঘনা নদীসহ শরিয়তপুর, চাদপুর, মাদারীপুর এলাকার পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ ধরছে জেলেরা। সেগুলো নদী থেকে সংগ্রহ করছেন কতিপয় মাছ ব্যবসায়ী। এর মধ্যে সদর উপজেলার কালিরচর এলাকার বাচ্চু মেম্বারের ছেলে রিপন ও শরিয়তপুর জেলার কাচিকাটা এলাকার বাদশা খান অন্যতম। এই দুই মাছ ব্যবসায়ী প্রতিদিন কয়েকশ মণ জাটকা পাচার করছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
পদ্মা মেঘনার মোহনা কালিরচর, কাচিকাটা, নড়িয়া বকচর চাঁদপুরের মদরব এলাকার গভীর নদীতে প্রতিদিন এ সব জাটকা ইলিশ ধরছেন শত শত জেলে। ওই সব জেলেদের কাছ থেকে কমদামে স্পিডবোট, নৌকা ও ট্রলারে ভরে জাটকা ইলিশ কিনে নিয়ে আসেন রিপন ও বাদশা গংরা। পরে এ সব মাছ মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদী সংলগ্ন বিভিন্নস্থানে ট্রাক-পিকআপে ভরে পাচার করা হচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়। মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদী পারের রাকিরকান্দি পার, কালির চর, শান্তি নগর ঘাট, যোগনীঘাট, চিতলীয়া, দেওয়ানকান্দি নদী পারের ঘাট দিয়ে এ সব জাটকা ট্রাক ও পিকআপে করে বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ ধরা হচ্ছে। গভীর নদী হতে রিপন বাদশা খানসহ মাত্র কয়েকজন পাইকার রয়েছে এগুলো কিনে নেয়। রিপন মালয়শিয়া থাকেন তিনি শুধু জাটকা বিক্রির মৌসুম শুরু হলে মালয়শিয়া থেকে এসে জাটকা বিক্রি করেন। জাটকা বিক্রির মৌসুম শেষ হলে তিনি আবার মালয়শিয়া চলে যান। প্রতিদিন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ট্রাকে ও পিকআপে ভরে জাটকা বিক্রি করছেন রিপন গংরা। প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্নস্থানের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টাকা দিচ্ছে রিপন গংরা। বিভিন্ন মানুষকে ম্যানেজ করেই তারা জাটকা বিক্রি করে।
সূত্রটি আরও জানায়, রিপন গংদের জাটকা বিক্রি মৌসুমে কখনোই থামে না। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে পুরোদমে এপ্রিল মাস পর্যন্ত জাটকা বিক্রি চলে। মাঝে মধ্যে প্রশাসন কঠোর হলে রিপন, বাদশা গংরা কখনো অ্যাম্বুলেন্সে করে কখনো মাছের ওপরে কাচা তরকারি দিয়ে লুকিয়ে মাছ পাচার করে। রিপন গংদের মাছ যখন বিক্রি হয় তখন মাছবোঝাই গাড়ির আগে বেশ কিছু মোটরসাইকেল থাকে। এ মোটরসাইকেলগুলো ট্রাকের আগে গিয়ে রাস্তার সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে সিগনাল দেয়।
জাটকা ইলিশ বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে রিপন বলেন, আমার বাপ-দাদারা এ ব্যবসা করেছেন। আমিও করি।
অপর জাটকা ব্যবসায়ী কাচিকাটার বাদশা খান বলেন, এ বছর ব্যবসায় অনেক লস হইছে। বেসনাল এলাকায় আমার মাছের একটা গাড়ি আটক হইছে। শুধু আমার মাছ আটক করেনি ওই গাড়িতে অন্যান্য মাছ ব্যবসায়ীর মাছও ছিল।
এদিকে, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির দুইশ গজের মধ্যে প্রতিদিন বসছে রমরমা জাটকা বিক্রির হাট।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন দিঘিরপার বাজারে ভোর থেকেই বসছে জাটকা ইলিশের হাট। বাজারের ৪২টি আড়তের প্রতিটিতেই কম-বেশি বসছে জাটকার হাট। প্রতিদিন ওই বাজারে কয়েকশ মণ জাটকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দিঘিরপার বাজারের পাশের রাকিরকান্দি খানকা শরিফের পাশে প্রতিদিন ভোর রাত ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত জাটকা বিক্রি হয়। ওই স্থানে হাট বসান দিঘিরপাড় এলাকার আক্কাস খাঁয়ের ছেলে নুরু খাঁ।
এছাড়া টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল মাছঘাটেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে জাটকা ইলিশ। এ সব ঘাটগুলো থেকে জাটকা কিনে স্থানীয় হাট বাজারসহ গ্রামে গ্রামে হেঁটে মাছ বিক্রি করেন ব্যাবসায়ীরা। এ সব হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাক-পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অবাধে বিক্রির জন্য যাচ্ছে জাটকা ইলিশ।
দিঘিরপাড় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, জাটকা বিক্রি বন্ধ করা মৎস্য কর্মকর্তার কাজ। মৎস্য কর্মকর্তারা যখনই অভিযান চালিয়েছে পুলিশ তাদের সার্বিকভাবে সহায়তা করেছে। এইতো এই বছর মৎস্য কর্মকর্তা তিন দিন অভিযান পরিচালনা করেছেন। প্রতিদিন আমি তাকে পুলিশ সদস্য দিয়ে সাহায্য করেছি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এটিএম তৌফিক মাহমুদ বলেন, আমরা তো প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু আমাদের লোকবল কম তাই বেশি অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। তাদের ছাড়াও একজন এসআই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারেন বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/এনইউ