‘বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক হবে আগামী বাজেট’
১০ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৫ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ২২:২১
ঢাকা: আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক হবে বলে জানিয়েছন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেছেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সরকরি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও বেশকিছু কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করছি।
রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে মতবিনিময় এই সভার আয়োজন করে।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন- এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় সংসদের অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রমুখ।
বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব মন্তব্য করে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘সরকার বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সরকার বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আয়কর, মূসক ও শুল্কসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমে কর কাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ঋণের সুদহার যৌক্তিক করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। আমাদের এই পদক্ষেপগুলো আরও কীভাবে সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আমরা বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করছি। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ বা তার বেশি মূসক পরিশোধে ই-পেমেন্ট, ই-চালান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
এ ছাড়া, পাইকারি পণ্য ও সেবা পর্যায়ে ইএফডিএমএস’র মাধ্যমে মূসক জাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে সাত হাজার এবং ক্রমান্বয়ে তিন লাখ ইএফডিএমএস মেশিন স্থাপনের লক্ষ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আশা করি, এই পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
মতবিনিময় সভায় আয়কর, মূসক, আর্থিক খাত, অবকাঠামো, শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে ডিসিসিআই’র নেতারা বলেন, করদাতা নিবন্ধন বাড়লেও সেই হারে রিটার্নের সংখ্যা বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কর প্রদান ব্যবস্থা আরও সহজ করতে হবে। আবার একটি টেকসই আর্থিক খাতের জন্য বেশকিছু আইন ও নীতির সংস্কার প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আর্থিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরাসহ খেলাপী ঋণ কমানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, রিজার্ভের ঘাটতি কমানো, ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি ও তারল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।
এ ছাড়া, শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে উৎপাদন বৃদ্ধি ও রফতানি আয় বাড়াতে পণ্য, সেবা এবং বাজার বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই। তাই রফতানীমুখী খাতসহ কৃষি, চামড়া, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি ও অন্যান্য উদীয়মান খাতের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন ডিসিসিআই’র নেতারা।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম