দারিদ্র্যের বাধা ডিঙিয়েই উদ্যোক্তা মিতালী
৯ মার্চ ২০২৪ ১১:১৬ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২৪ ১২:১৮
খুলনা: জেলার রূপসা উপজেলার ৫ নম্বর ঘাটভোগ ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামের বাসিন্দা মিতালী পাল (২০)। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। কিন্তু অভাবের সংসারে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায় তার জন্য। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। নিজেই বের করেছেন লেখাপড়ার ব্যয় মেটানোর রাস্তা। যা আজ তাকে উদ্যোগতার খেতাব দিয়েছে। আর মিতালীর এই কাজে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছেন তার মা টুম্পা রানী।
মিতালীর বাবা বিরেন চন্দ্র পাল পেশায় একজন দিনমজুর। পরের জমিতে কাজ করেন। আর টুম্পা রানী ছিলেন ব্রাক স্কুলের শিক্ষক। দু’জনের যে আয় তা দিয়ে কোনো মতে তাদের সংসার চলত। করোনাকালে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে তার মায়ের চাকরি চলে যায়। তখন শুধু পিতার স্বল্প আয়ে মিতালীর লেখাপড়া করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ান মিতালী। অংশ নিয়েছেন রূপসা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে আয়োজিত নারী উদ্যোক্তা মেলায়।
শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকেলে এভাবেই নিজের লড়াইয়ের কথাগুলো সারাবাংলা কাছে বলেন মিতালী পাল। তিনি বলেন, ‘একদিন কলেজ শেষ করে নিজের জন্য একটি পুঁথির মালা তৈরির সরঞ্জাম কিনতে খুলনা মহানগরীর একটি মার্কেটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি একটি দোকানে প্রচুর ভিড়। দেখলাম বিভিন্ন বয়সের নারীরা গলার মালাসহ হাতে তৈরি বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করছে। এরপর বাসায় এসে মাকে বিষয়টি জানালাম। এ বিষয়ে অনেক আগে আমার মা একটা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তার কাছ থেকে শিখে বিভিন্ন গহনা তৈরি করা শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমার ব্যবসার মুনাফা ছিল ১৫০ টাকা। নিজের হাতে মেটাল, ফুল, কাঠের ও মাটির গয়না তৈরি করি। এগুলো সর্বোচ্চ ৬০০ থেকে সর্বনিম্ন ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করি। এই মেলায় নিজের হাতে তৈরি ৫০ ধরনের পণ্য নিয়ে এসেছি।’
মিতালী আরও বলেন, ‘‘একজনের মাধ্যমে শুনলাম সবাই অনলাইন থেকে গহনাসহ বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করে। তারপর আমার বড় ভাই রাজু পাল, ‘সন্ধ্যা পূজা গহনা ঘর’ নামে একটি ফেসবুকে একটি পেজ খুলে দেয়। সেখানে আমার হাতে তৈরি পণ্যর ছবি আপলোড দিতে থাকি। প্রতিবেশী নারীরা বিষয়টি জানতে পেরে আমার কাছ নানা ধরনের গহনা কেনাকাটা করে। প্রথম বারের মতো আমার পণ্য নিয়ে এ মেলায় অংশ নিয়েছি। বর্তমানে এগুলো বিক্রি করে যে অর্থ আয় হয়। সে টাকা দিয়ে আমার লেখাপড়ার খরচ চলে যায়।’’
সামনে ব্যবসাটি কিভাবে এগিয়ে নিতে চান জানতে চাইলে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। একটি ব্যবসা বড় করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যদি সরকার বা বিত্তবান ব্যক্তিদের কোনো ধরনের সহযোগিতা পাই। তাহলে আরও বড় কিছু করার ইচ্ছা আছে।’
মিতালী পালের মা টুম্পা রানী দত্ত বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করে। আমার মেয়ে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমার মেয়েকে নিয়ে আমাদের পরিবার গর্ববোধ করে।’
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আহমেদুল কবীর চাইনিজ বলেন, ‘এটা একটা ভালো উদ্যোগ। একজন শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে এমন কাজের মাধ্যমে তার সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ হচ্ছে। আবার সে আর্থিক ভাবেও স্বাবলম্বী হতে পারছে। তার লেখাপড়ায় অনেক কাজ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সব থেকে বড় কথা তার মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। এই প্রতিভার বিকাশ হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উচিত এইসব উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা ও অনুপ্রেরণা দেওয়া।’
রূপসা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাসি রানী রায় বলেন, ‘নারীরা অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ অনেক উদ্যোক্তাই সফলতার মুখ দেখছেন। আমরা নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করে চলেছি।’
সারাবাংলা/আরআইটি/এনএস