বিজিএমইএর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দিন আজ
৯ মার্চ ২০২৪ ০০:১১ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪১
ঢাকা: দেশের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন আজ শনিবার (৯ মার্চ)। নির্বাচন উপলক্ষে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ৩৫ পরিচালক পদে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণে প্রায় আড়াই হাজার ভোটার তাদের রায় দেবেন।
নির্বাচনে এবার দুটি প্যানেল সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫টি পরিচালক পদে প্যানেল দুটি থেকে লড়ছেন ৭০ জন প্রার্থী। ভোটের লড়াইয়ে যারা মাঠে আছেন, তাদের মধ্যে এবার রয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা। নজরকাড়া নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দেওয়া দুই প্যানেলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনের আভাসও মিলছে। গত এক মাস ধরে দুই প্যানেলের প্রচার-প্রচারণাও ছিল লক্ষ্যণীয়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বিজিএমইএ নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলের ভোটার দুই হাজার ৩২ জন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৬৪ জন। ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রামের দক্ষিণ খুলশীতে অবস্থিত বিজিএমইএর আঞ্চলিক কার্যালয়ে একযোগে ভোট হবে। উভয় অঞ্চলের ভোটার যেকোনো একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন। প্রত্যেক ভোটারকে ঢাকায় ২৬ ও চট্টগ্রামের ৯ প্রার্থীর জন্য মোট ৩৫টি ভোট দিতে হবে। কম বা বেশি ভোট দিলে পুরো ব্যালট বাতিল হয়ে যাবে।
গত কয়েক বছর ধরে বিজিএমইএ নির্বাচনে মূলত দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম— এই দুটি প্যানেলের নেতারাই বিজিএমইএর সভাপতি ও অন্যান্য পদে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এবার ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সুরমা গার্মেন্টেসের কর্ণধার ফয়সাল সামাদ। সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সেহা ডিজাইন (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম মান্নান কচি।
বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান সম্মিলিত পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে এসেছেন। আর তার আগের কমিটির সভাপতি ড. রুবানা হক ছিলেন ফোরামের নেতা। রুবানা হকের কমিটিতে ফয়সাল সামাদ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন। আর সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। ফলে ‘প্রশ্ন না ওঠে’— এমন নির্বাচন করার আহ্বান বারবার জানিয়ে আসছেন ফোরাম নেতা ফয়সাল সামাদ।
সম্মিলিত পরিষদ ১৫ দফার ইশতেহারে পোশাক শিল্প খাতের সংকট, আগামীর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। বিজয়ের পর এসব সংকট সমাধানে তারা কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পরিষদ বিজয়ী হলে এসএমই শিল্পের টেকসই উন্নয়ন, ব্যবসা সহজীকরণ, রাজস্ব সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের ঘোষণা দেওয়া হবে। পাশাপাশি শুল্ক, আয়কর, ভ্যাট, নগদ সহায়তা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং ব্যাংক ও আর্থিক সেবা সংক্রান্ত জটিলতা সমাধান, টেকসই শিল্পায়ন, সমৃদ্ধ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এ ছাড়া পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ, অংশীদারমূলক বিজিএমইএ গঠন, সবুজ বিপ্লবের সমৃদ্ধির মাধ্যমে পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়ন করার লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছে সম্মিলিত পরিষদ। পোশাক খাতের মধ্যম শ্রেণির ব্যবস্থাপকদের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা, সার্কুলার ইকোনমি, ইউনিফাইড কোড অব কন্ডাক্ট এবং আরসিসি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের।
সম্মিলিত পরিষদের ইশতেহারে ব্যাংক ও আর্থিক সেবা খাত সংক্রান্ত উদ্যোগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিংগেল ডিজিটে নামিয় আনা এবং ইনস্টলমেন্টের আকার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের জন্য ডলারর বিশেষ পৃথক রেট ধার্যকরণের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ।
এদিকে স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট বিজিএমইএ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফোরাম। ইশতেহারে দেওয়া ফোরামের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে— স্মার্ট বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা; স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা; এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যমাত্রা ও পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং জিএসপি প্লাসের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা; পোশাক শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন; ক্রেতার জবাবদিহিতা ও পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা; নতুন বাজারের উন্নয়ন এবং প্রচলিত ও অপ্রচলিত বাজারে নিজস্ব বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা; শিল্পের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা; ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা; রুগ্ন শিল্প এবং ব্যবসা থেকে সম্মানজনক প্রস্থানের নীতি প্রণয়ণ; শিল্পের কমপ্লায়েন্স ও ব্যবসা সহজীকারণ।
ফোরামের ইশতোহারে বলা হয়েছে— স্মার্ট বিজিএমইএ গঠনের লক্ষ্যে বিজিএমইএর সব কার্যক্রম অনলাইনে নিয়ে আসা হবে। পোশাক শিল্প খাতের প্রতিটি কারখানার জন্য স্বল্পমূল্যে ইআরপি সার্ভিসের উদ্যোগ নেওয়া হবে। অনলাইনে চাঁদা প্রদান ও সদস্যপদ নবায়নের সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মিড ম্যানেজম্যান্ট ও শ্রমিকদের অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে প্রতিটি কারখানার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত স্বতন্ত্র প্রোফাইল তৈরি ও কারখানার গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও সংযুক্ত করা হবে। আরও বেশ কিছু প্রতিশ্রুত দিয়েছে ফোরাম।
এদিকে ফোরামের প্যানেল লিডার ‘প্রশ্ন না ওঠে’— এমন একটি নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছে আসছেন। ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘আমরা প্রশ্নাতীত (আনকোয়েশ্চেনবল) ইলেকশন চাই। এ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক। আশা করি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’
এদিকে ফোরামের পক্ষ থেকে ভোটার তালিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে নির্বাচনের শুরু থেকেই। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায়ও মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে বলে অভিযোগ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্যানেল ফোরামের। প্রায় শুরু থেকেই ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে এই প্যানেল। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করারও আহ্বান জানিয়েছে প্যানেলটি।
এদিকে সম্মিলতি পরিষদ এসব অভিযোগ নাকচ করে আসছে। ভোটার তালিকা নিয়ে ফোরামের আপত্তি অবান্তর বলে মনে করেন সম্মিলতি পরিষদের নেতারা। তারা বলছেন, সব প্রক্রিয়া মেনেই ভোটার চূড়ান্ত করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আইন আদালতে গিয়েও ভোটার তালিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠানো হয়েছিল, তা প্রমাণ হয়নি।
ফোরাম নেতা ফয়সাল সামাদ ‘প্রশ্ন না ওঠে’— এমন নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সম্মিলতি পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি শুক্রবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমিও তার (ফয়সাল সামাদ) সঙ্গে একমত। বিজিএমইএর নির্বাচন সবসময় উৎসবমুখর পরিবেশে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে হয়ে আসছে। আমিও সে রকম নির্বাচনই চাই। আমিও চাই নির্বাচন নিয়ে যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।’
সম্মিলিত পরিষদ থেকে পরিচালক প্রার্থী ইমরানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের পূর্ণ প্যানেল জয়ী হবে, আমরা সে ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। পুরো প্যানেল নিয়ে আমাদের প্যানেল লিডার সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হবেন। সম্মিলতি পরিষদের সাবেক সব নেতারা পুরোদমে কাজ করেছেন। আমরা নির্বাচনে সেই ফল পাব।
ফোরাম থেকে পরিচালক প্রার্থী ইভিটেক্স ড্রেস শার্ট লিমিটেডের শাহ্ রাঈদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আগেরবারের চেয়ে এবার ভালো সাড়া পাচ্ছি। এবার ফোরামের গোল্ডেন টাইম। আমরা আশা করি সর্বোচ্চ ভোটার এলে ফোরামের পক্ষে ভালো রায় আসবে। সবাই যেন ভোট দিতে আসেন, সেই আহ্বান জানাচ্ছি। সব মিলিয়ে এবার ফোরাম জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
টপ নিউজ তৈরি পোশাক খাত পোশাক খাত বিজিএমইএ বিজিএমইএ নির্বাচন বিজিএমইএ নেতৃত্ব নির্বাচন