‘বাউ মুরগি’ পালনে স্বাবলম্বী সীমান্তবর্তী নারীরা
৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪০ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২৪ ০১:২৮
চুয়াডাঙ্গা: সাংসারিক কাজের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলার গ্রামীণ জনপদে বসবাসরত নারীরা গরু, ছাগল, ভেঁড়া, হাঁস ও মুরগি পালন করে নিজেরাই হচ্ছে স্বাবলম্বী। এরই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী সুলতানপুর গ্রামের ২৫ জন নারী পরিকল্পিতভাবে ১৫০টি ‘বাউ মুরগি’ পালনের পর ৪৩ দিনের মাথায় বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে। এতে অল্পদিনে ভালো লাভের আশায় এ জাতের মুরগি পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে নারীরা।
চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের গ্রাম সুলতানপুর। অবহেলিত এ গ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমাগত মানুষের জীবন ধারণের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এরই মাঝে ২০২৩ সালের গত ১৮ ডিসেম্বর পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রাণিসম্পদ খাত নিরাপদ মাংস উৎপাদনে জলবায়ু সহিষ্ণু ‘বাউ মুরগি’ পালনের জন্য ২৫ জন নারীকে বেছে নেয়। তাদেরকে ৪৩ দিন পালনের জন্য ১৫০টি মুরগি দেওয়া হয়।
এর আগে তাদের বসতবাড়িতে তৈরি করে দেওয়া হয় বাঁশের মাচা। তারপর মুরগি পালনের ধারণা ও কলাকৌশল জানাতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সব শেষে জীবাণুনাশক ও মুরগির টিকাও দেওয়া হয়।
সীমান্তবর্তী পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মুরগি পালনকারী রহিমা বেগম বলেন, ‘প্রশিক্ষণ শেষে আমরা জানতে পারি বাউ মুরগি ৪২ থেকে ৪৩ দিনে গড় ১ কেজি ওজন হবে। ১৫০টি মুরগি পালনে এখনো পর্যন্ত ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ মুরগিগুলো যদি বিক্রি করতে পারি তাহলে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ হবে।’
একই গ্রামের চন্দনা খাতুন বলেন, ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ১৫০টি মুরগি পেয়েছিলাম, এর মধ্যে ১৮টি মারা গেছে। মুরগি পুষতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। আশা করি লাভ হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।’
চুয়াডাঙ্গা ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশনে’র প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. এহ্তেশামুল হক বলেন, ‘আমরা ২৫ জনের প্রত্যেককে পালনের জন্য ১৫০টি করে মুরগি দিয়েছিলাম। আগে আমরা আমাদের সদস্যদের মধ্যে এ মুরগি সম্পর্কে আলোচনা করে নিয়েছি। এতে লাভ এবং গ্রহণযোগ্যতা দুটিই চলে আসে। অনেকে সোনালী ও দেশি মুরগি খেতে চান। সোনালী মুরগি পালনে দেখা যায় দু’মাসে এর ওজন ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয়। সেক্ষেত্রে লাভ কম হয়। কিন্তু বাউ মুরগি ৪২ থেকে ৪৩ দিনে ১ কেজি ওজন হচ্ছে। এ মুরগির মাংসের স্বাদ সোনালী ও দেশি মুরগির মতো। এ ব্যাপারগুলো জানানো হলে নারীরা মুরগি পালনে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদেরকে ১৫০টি মুরগির বাচ্চা ও মাচা তৈরি বাবদ খরচ এবং জীবানুনাশক ও মুরগির টিকা সঠিকভাবে দেওয়া হয়।’
‘মুরগি পালনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারা সেটা যথাযথভাবে গ্রহণ করে। ৪২ দিনে একেকটি মুরগি ১ কেজিরও বেশি ওজন হয়েছে। সে কারণে এটার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। অনেকে এ মুরগি পালন বড় আকারে করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ নিয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী’, বলেন ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশনে’র এই কর্মকর্তা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ মো. মশিউর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন প্রাণিসম্পদ বিষয়ে ব্যাপক কাজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাউ মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাউ মুরগির বাচ্চা বড় হয় সন্তোষজনকভাবে এবং মৃত্যুর হার কম। ৪৩ দিনের মধ্যে এ বাচ্চা ১ কেজি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এ মুরগির বৈশিষ্ট্য হলো এর মাংস খুবই সুস্বাদু।
এই মুরগি পালনে গ্রামীণ পুষ্টি ও আমিষের অভাব পূরণসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে, বলেও আশা প্রকাশ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এমও