মানি লন্ডারিং মামলায় ড. ইউনূসের জামিন মঞ্জুর
৩ মার্চ ২০২৪ ১৮:২৩
ঢাকা: গ্রামীণ টেলিকমের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৩ মার্চ) ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জামিন দেন।
এদিন বেলা আড়াইটায় তিনি ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। অপর দিকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর ড. ইউনূসের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ড. ইউনূসের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে, সকালে ড. ইউনূস শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের করা মামলায় কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন নেন।
গত বছরের ৩০ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
ড. ইউনূস ছাড়া অভিযোগপত্রে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম এবং এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দফতর সম্পাদক মো. কামরুল হাসানকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কামরুল হাসানের নাম তদন্তের পর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অপর ব্যক্তিদের নাম এজাহারে ছিল। মামলায় ড. ইউনূস ও পারভীন মাহমুদ জামিনে আছেন। অন্য ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
দুদক জানায়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৮ মে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনার লভ্যাংশ বিতরণে শ্রমিক ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকমের মধ্যে একই বছরের ২৭ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছিল। চুক্তিতে ৮ মে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। কাগজপত্র নকল করে এটা করা হয়েছে।
দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ড সভার (গ্রামীণ টেলিকম) সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কর্মচারীদের লভ্যাংশের টাকা বিতরণ না করে তা আত্মসাৎ করা হয়।
তবে ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘কর্মীরা লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা চেয়ে আদালতে গেলে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে আইনজীবীদের খরচ বাবদ কর্মীরা ওই ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন। সেটিই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মীদের লিখিত সম্মতি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্মীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে দেরি করায় চুক্তিতে সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পরে দুই পক্ষ সেখানে ব্যাংক হিসাব নম্বর বসায়। সেটি সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে।’
লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী শতাধিক মামলা করেছিলেন। তারা হাইকোর্টেও গিয়েছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়।
ড. ইউনূসের আইনজীবীদের দাবি, সমঝোতার মাধ্যমে পাওনা পেয়ে কর্মীরা ২০২২ সালের মে মাসে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। এরপর পাওনা পরিশোধের বিষয়টিকেই অর্থ আত্মসাৎ হিসেবে ধরে মামলা দায়ের করে দুদক।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম