ডিসি সম্মেলন শুরু রোববার, উঠছে ৩৫৬ প্রস্তাব
২ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫৯
ঢাকা: মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয় ও মাঠের বাস্তবতা অনুধাবনের লক্ষ্যে আগামীকাল ৩ মার্চ (রোববার) থেকে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৬টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
শনিবার (২ মার্চ) সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৪’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। সম্মেলনে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী ও সচিবেরা সরাসরি উপস্থিত থেকে ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এছাড়া এই সম্মেলন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসকরা রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি ও স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণ করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবার ডিসি সম্মেলনে থাকছেন না। সম্মেলন শুরুর আগেই তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য সফরে যাবেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, এবার সম্মেলনে মোট ৩০টি অধিবেশন হবে। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২৫টি। এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে একটি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে দুটি অধিবেশন হবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের মন্ত্রী/উপদেষ্টা/প্রতিমন্ত্রী/সিনিয়র সচিব/সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। এবার সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অংশ নেবে।
এবার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৬টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোতে জনসেবা বাড়ানো, জনদুর্ভোগ কমানো, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইন-কানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশি সংখ্যক প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংক্রান্ত। এ সংক্রান্ত মোট প্রস্তাব ২২টি।
সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য বিষয়ে থাকছে: ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন; এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এরই মধ্যে ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন তাদেরকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে। গত বছরও তিন দিন সম্মেলন হয়েছিল, আসলে তিন দিনে সব আলোচনা সম্ভব হয় না সেজন্য এবার চার দিনব্যাপী সম্মেলন হবে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়। এবারও আসছে প্রস্তাব। সব মিলিয়ে সম্মেলনে এবার ৩৫৬ টি আলোচ্য বিষয় থাকছে।
গত বছরের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত বছর সম্মেলন জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়।এবার নির্বাচন থাকায় মার্চে হচ্ছে। গত বছর মোট ২১২টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এর মধ্যে ১৩০টি বাস্তবায়ন, বাস্তবায়নাধীন ৮২টি সিদ্ধান্ত। শতকরা হিসাবে বাস্তবায়ন ৬২ শতাংশ। এতে মন্ত্রিপরিষদ সন্তুষ্ট বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন বাস্তবায়নের বাকি এখনও চার বছর। অতএব বাস্তবায়নে অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণ দেখছি না।
মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়নের হার কম এটা নজরদারি করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কীনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে অনেক জেলা প্রশাসক নিজ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করছেন।
তিনি বলেন, এবারই প্রথম এই সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। এ পর্যন্ত তিনজন আসবেন বলে জানা গেছে।
তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে কী কী নির্দেশনা দেওয়া হবে তার রেকর্ড আমরা রাখব, পরে দেখব তারা সেসব বাস্তবায়ন করা হলো কীনা।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মন্ত্রী ও সচিবদের উপস্থিতিতে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে নানা সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসকরা। এর বিপরীতে তাদের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সেজন্য এই সম্মেলন এবং জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাব বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
সারাবাংলা/জেআর/এনইউ