ইবিতে বিবস্ত্র করে র্যাগিং: সাক্ষ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তি ২ কমিটির
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৪ | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১৭
কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের ঘটনায় চারজনকে অভিযুক্ত হিসেবে ধরে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিনত তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী থাকলে মৌখিক বা লিখিতভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এ ছাড়া র্যাগিং নিয়ে কোনো তথ্য থাকলে প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে জানানোর আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।
ইবির লালন শাহ হলের নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দুটি টাঙানো হয়েছে। ইবি প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি নোটিশে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শী কেউ থাকলে ৫ মার্চের মধ্যে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মার কাছে মৌখিক বা লিখিত আকারে সাক্ষ্য দিতে পারবেন। তথ্যদাতার নাম ও পরিচয় শতভাগ গোপন রাখা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন ড. দেবাশীষ।
এদিকে হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, র্যাগিং নিয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থকলে তা ৪ মার্চ দুপুর ২টার পর প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানাতে হবে।
আরও পড়ুন- ইবিতে ফের বিবস্ত্র করে র্যাগিং: ‘ও কথায় কথায় হাসে এজন্য মারছি’
লালন শাহ হলের র্যাগিংয়ের ওই ঘটনায় ইবি প্রশাসন ও হল প্রশাসনের এই দুটি তদন্ত কমিটিই কাজ করছে। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটিগুলো ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য নিয়েছে। এ ছাড়াও লালন শাহ হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বক্তব্যও শুনেছে তদন্ত কমিটি। সেসব বক্তব্যে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
র্যাগিংয়ের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত চারজন হলেন— ইবি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মুদাচ্ছির খান কাফি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সাগর, একই বিভাগের উজ্জল হোসাইন এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ইউসুফ সানী। তারা সবাই ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই আমরা কথা বলছি। গণবিজ্ঞপ্তির সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর যত দ্রুতসম্ভব আমরা প্রতিবেদন জমা দেবো।
আরও পড়ুন- ইবিতে বিবস্ত্র করে র্যাগিং: এবার প্রশাসনের তদন্ত কমিটি
অভিযুক্তদের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. দেবাশীষ বলেন, পত্র-প্রত্রিকায় যেসব নাম এসেছে, আপাতত তাদের অভিযুক্ত ধরেই আমরা আগাচ্ছি।
এদিকে এর আগে ফুলপরী র্যাগিংকাণ্ডে তদন্ত কমিটির কাছে তথ্য দেওয়ার পর সাক্ষী বা তথ্যদাতাদের নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এবারের গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বা তথ্যদাতাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখার কথা থাকলেও তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা গণরুমে যারা থাকি, বড় ভাইদের কথা শুনে চলতে হয়। সাক্ষী দেওয়ার পর আমার নাম তারা জেনে গেলে পরে আমাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে।
শিক্ষার্থীদের এই উদ্বেগকে আমলে নিলেও তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখার বিষয়ে আশ্বস্ত করছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. দেবাশীষ। তিনি বলেন, এর আগে কীভাবে ব্যাপারটা ছড়িয়েছে, আমার জানা নেই। অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়েছিল, তাই বলা কঠিন কোন কমিটি থেকে তথ্য ছড়িয়েছিল। তবে এবারে এমন কিছু হবে না। আমরা তথ্যদাতাদের পরিচয় শতভাগ গোপন রাখব।
আরও পড়ুন- ইবিতে গণরুমে ফের র্যাগিং: হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি
ইবির লালন শাহ হলে এই র্যাগিংয়ের ঘটনাটি ঘটে গত ৭ ফেব্রুয়ারি। অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই দিন হলের গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে রাতভর র্যাগিং করা হয়। রড দিয়ে মারধরের পাশাপাশি পর্নোগ্রাফি দেখনো হয়, বিবস্ত্র অবস্থাতেই টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ইবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি ‘ঘরোয়াভাবে সমাধান’ করায় এবং ‘বিশেষ চাপ’ প্রয়োগ করায় তাৎক্ষণিকভাবে তিনি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতে পারেননি। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এরই মধ্যে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ৎ
- ইবিতে র্যাগিং: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রী হল থেকে বহিষ্কার
- ইবিতে ছাত্রী র্যাগিংয়ের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি
- ইবিতে ভাঙচুর ও র্যাগিং: একজন স্থায়ীসহ ছয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার
- হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়লেন ইবির র্যাগিংয়ে অভিযুক্তরা
- ইবিতে নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠিত
সারাবাংলা/টিআর
ইবি ইবিতে র্যাগিং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় টপ নিউজ তদন্ত কমিটি র্যাগিং