Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একুশের দিনে পাঠক-দর্শনার্থীতে বইমেলা টইটুম্বুর, বিক্রি গড়পড়তা!

আসাদ জামান
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৩

বইমেলার একটি স্টলে দুই সন্তানের সঙ্গে মা, সবার পরনেই সাদা-কালোর ছোঁয়া। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

বিকেল ৩টা। টিএসসিসংলগ্ন গেট দিয়ে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশের সময় মনে মনে যে দীর্ঘ লাইন আশা করেছিলাম, তেমনটি চোখে পড়ল না। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতো নাতিদীর্ঘ লাইন। তবে এই নাতিদীর্ঘ লাইনেও প্রাণপ্রাচুর্যে অভাব বোধ হলো না। দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে সাদা-কালো রঙের শাড়ি পরে নানা বয়সী নারী একুশের ভাবগাম্ভীর্য সঙ্গী করে মেলায় প্রবেশ করছেন। পুরুষ দর্শনার্থীদের পরনেও সাদা-কালো পাজামা-পাঞ্জাবি। আজ থেকে ৭২ বছর আগে ভাষার জন্য জীবন দেওয়া বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের স্মরণে সবার এই বসন ধারণ।

বিজ্ঞাপন

পাঠক, লেখক, দর্শনার্থী, প্রকাশক ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও নিজ নিজ ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী বইমেলা মূলত পূর্ণতা পায় একুশে ফেব্রুয়ারির দিন। অন্য দিনের তুলনায় এ দিনটিতে বইমেলায় লোকজনের আনাগোনা থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এবার সকাল ও দুপুরের চিত্র ছিল ভিন্ন। সকাল ৮টায় বইমেলার দ্বার উন্মোচন হলেও পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড় তো দূরের কথা, ছিটাফোঁটাও ছিল না। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকেও তাদের উপস্থিতি ছিল গড়পড়তা।

বিজ্ঞাপন

তবে এ চিত্র পালটে যেতে সময় লাগেনি। বিকেল ৪টার পর থেকে টিএসসি গেট, রমনা কালী মন্দির গেট ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন গেট দিয়ে স্রোতের মতো মানুষ ঢুকতে থাকে বইমেলায়। বিকেল ৫টা নাগাদ পাঠক-দর্শনার্থীতে বইমেলা টইটুম্বুর হয়ে যায়। যেদিকে চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ।

একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনে বইমেলায় আগত নারী পাঠক-দর্শনার্থীর অনেকের পরনেই ছিল সাদা-কালো শাড়ি। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুটের বইমেলায় ৬৩৫টি স্টল আর ৩৭টি প্যাভিলয়ের সামনে-পেছনের ফাঁকা জায়গাসহ আশপাশের এলাকা, জলাধারের তিন পাশ, ফুডজোন, উন্মুক্ত মঞ্চ, লেখক বলছি মঞ্চ, মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ— সব খানেই মানুষ আর মানুষ। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বইমেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থী ঘুরে-ফিরে সময় কাটিয়েছেন। চা-কফিতে আড্ডার অনুষঙ্গ বাদ যায়নি। তরুণ লেখকদের একটি অংশ নিজ নিজ বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়নে বসেছিলেন পাঠকের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে, কথা বলতে।

বিকেল ৪টার দিকে পাঠক সমাবেশের প্যাভিলিয়নে আড্ডা দিতে হাজির হন তরুণ কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ও মোজহার হোসেন। অনার্য প্রকাশনীর স্টলে আড্ডা দিতে এসেছিলেন কবি ও প্রাবন্ধিক মাহবুবুর রমান তুহিন। এবার বইমেলায় তার দুটি বই বেরিয়েছে— প্রবন্ধের বই ‘সময়ের সংলাপ’ ও কাব্যগ্রন্থ ‘চেক বই’।

ছেলেদের অনেকেও সাদা-কালো পাঞ্জাবি পরে মেলায় গিয়েছিলেন। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

অনার্য প্রকাশনীর স্টলে লেখক আড্ডা জোনে কথা হয় মাহবুবুর রহমান তুহিনের সঙ্গে। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিতে হয়, কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি। কাল ধাবমান। সময় বহমান। কালের খেয়া বয়ে চলে সারাবেলা। প্রতি মুহূর্তেই বেজে ওঠে সময়ের ঘড়ি। আর সময়ের সমষ্টিই জীবন। তাই সময় আর জীবন এক সত্তার অভিন্ন রূপায়ন। আমাদের জীবনযাপনের এইসব দিনরাত্রির কথাগুলোই ‘সময়ের সংলাপ’।

প্রকাশক অনার্য পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী শফিক রহমান বলেন, ‘সময়ের চোখ খোলা, হাত বাঁধা নেই। তাই কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে শুনতেই সংলাপ সাজে মনের মুকুরে। তখন সংলাপগুলো হয়ে ওঠে মনের আয়না। এই আয়না কোনো বায়না রাখে না। তাই সংলাপগুলো নিঃসঙ্গ ফেরিওয়ালা, যে প্রার্থনা করে সাহসী পুরুষের। এগুলোরই শৈল্পিক বয়ান মাহবুব রহমান তুহিনের প্রবন্ধের বই সময়ের সংলাপ।’

ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহ কেবল অতিক্রান্ত হয়েছে। তাই ফাগুনের সাজে এখনো চলছে বসন্ত উদ্‌যাপন। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

লেখক-পাঠকদের এই মহামিলনমেলায় বই বিক্রি কেমন— সে অনুষঙ্গটিও গুরুত্বপূর্ণ। বইমেলায় আসা সবাই যে বই কিনবে, এমনটি ভাবা বাস্তবতাবিরোধী। তবে বিশাল জনমুদ্রের দুয়েকটা ঢেউ বই বিক্রির গতি বাড়াবে না, তা কী হয়! মেলায় আসা ১০ শতাংশ মানুষের হাতে বই থাকলেও দৃশ্যটা আরামদায়ক হয় বৈকি! মেলা পূর্ণতা পাওয়ার দিন সে দৃশ্য মোটামুটি আরামদায়কই ছিল। মেলায় যারা এসেছেন তাদের বেশির ভাগই দর্শনার্থী হয়ে ঘুরে ফিরে সময় কাটালেও কারও কারও লক্ষ্যই ছিল পছন্দের বইগুলো কিনে নেওয়া।

শান্তিনগর থেকে একমাত্র কন্যাকে নিয়ে বইমেলায় এসেছিলেন আমিনুল ইসলাম। শিশু চত্বর থেকে বেশকিছু বই কিনে চার বছর বয়সী রাজকন্যাটির সঙ্গে জলাধারে বসে খুনসুঁটি করছিলেন। বইমেলা ও বই কেনার অনুভূতি জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘তার (মেয়ে তাবাস্সুম বিনতে আমিন) জন্যই আজ বইমেলায় আসা। বিকেলে এলে ভিড়ের মধ্যে পড়তে হবে, তাই দুপুরেই চলে এসেছিলাম। কিন্তু এখন সে বের হতে চাচ্ছে না। আরও কিছু সময় থাকতে চায়। কিন্তু আমি তো বুঝতে পারছি, বিকেল বা সন্ধ্যায় বের হয়ে বাসায় ফেরা কঠিন হয়ে যাবে।’

একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিতে বিকেল গড়াতে গড়াতেই বইমেলায় পা ফেলার জায়গা থাকে না। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

দিব্য প্রকাশ থেকে বই কিনে ফিরছিলেন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শ্রী চৈতন্য চন্দ্র দাশ। স্যার, কী বই কিনলেন— প্রশ্ন শুনেই চমকে উঠলেন তিনি। পেছন ফিরে স্নেহের ছাত্রকে দেখে যারপরনাই পুলকিত! কুশলাদি জিজ্ঞাসা শেষে বললেন, ‘শ্রী রমেশচন্দ্র মজুমদারের বাংলাদেশর ইতিহাস সিরিজের বইগুলো কিনলাম। তুমি তো জানো, বয়স হলে মানুষ পেছন ফিরে দেখতে চায়। আর তখন তাকে ইতিহাসের কাছে ফিরে যেতে হয়। এখন ইতিহাসই বেশি পড়ছি। আর এ ধরনের বইয়ের জন্য দিব্যপ্রকাশ সব সময় এগিয়ে। তাই এখান থেকে কিছু বই কিনলাম।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

অমর একুশে বইমেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ একুশে ফেব্রুয়ারি টপ নিউজ বইমেলা বইমেলা ২০২৪ বইমেলায় ভিড়

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর