শনাক্ত হয়নি নিপাহ ভাইরাস, অজানাই থাকল ২ বোনের মৃত্যুর কারণ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৩ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:১৯
রাজশাহী: জ্বর ও বমির পর শরীরে ছোপ ছোট কালো দাগ উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা দুই বোনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। কুড়িয়ে নেওয়া বরই না ধুয়ে খাওয়ায় তারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে ধারণা করা হয়েছিল। তবে পরীক্ষায় নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তাদের মৃত্যুর কারণ জানতে ঢাকায় পাঠানো নমুনার নানা পরীক্ষা চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি বিশেষজ্ঞ দলও রাজশাহী যাচ্ছে অনুসন্ধানের জন্য।
গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুই বছর বয়সী শিশু মুনতাহা মারিশা (২) ও শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) তার বড় বোন সাড়ে চার বছর বয়সী মুফতাউল মাশিয়ার মৃত্যু হয়। তাদের বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তাদের গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) ও দুই মেয়েকে নিয়ে চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি।
পরিবার ও রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার কুড়িয়ে আনা কলেজ ক্যাম্পাসের একটি গাছের বরই খাওয়ার পরদিন বুধবার সকালে জ্বরে আক্রান্ত হয় মারিশা, দুপুরে শুরু হয় বমি। শরীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ উঠতে শুরু করে। রাজশাহীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। একদিন পর শুক্রবর সকালে জ্বর আসে মাশিয়ার। তার শরীরেও মারিশার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তাকে সিএমএইচ থেকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার মৃত্যু হয় মাশিয়ার।
আরও পড়ুন- ‘বরই খেয়ে’ ২ বোনের মৃত্যু, মা-বাবা আইসোলেশনে
দুই সন্তানের মৃত্যুর পর সংক্রমণের আশঙ্কায় তাদের মা-বাবাকে রামেক হাসপাতালের আইসোলেশনে রেখেছেন চিকিৎসকরা। তারা ধারণা করছিলেন, নিপাহ ভাইরাস কিংবা মিশেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিল মাশিয়া-মারিশা। তবে মাশিয়া ও তার মা-বাবার নমুনা পরীক্ষায় ওই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কোনোটিই শনাক্ত হয়নি।
রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা নিপাহ ভাইরাস আর মিশেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার আশঙ্কা করেছিলাম। দুটো পরীক্ষার রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। আমরা আশঙ্কা করছি, কুড়িয়ে আনা বরই না ধোয়া অবস্থায় খেয়েই অজানা কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল শিশু দুটি। এভাবে জ্বর, বমির পর র্যাশ উঠে এত দ্রুত রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা আগে দেখিনি।’
ডা. আবু হেনা বলেন, ‘এটা কী ভাইরাস, তা চাইলে সরকার বের করতে পারবে। মাশিয়া মারা যাওয়ার আগেই তার পাকস্থলী থেকে কিছু খাবার বের করে সংরক্ষণ করেছি। আইইডিসিআর চাইলে আমরা দিতে পারব। পরীক্ষা করলে কিছু জানা যেতেও পারে।’
আইইডিসিআরে ইএলআইএসএ ও পিসিআর পদ্ধতিতে নিপাহ ভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মিশেরিয়া ব্যাকটেরিয়া শনাক্তের পরীক্ষাও আলাদাভাবে করা হয়। দুটি রিপোর্টই নেগেটিভ আসায় শিশুরা কীসে আক্রান্ত ছিল তা জানা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহীর একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেন, ‘দেশে নিপাহ ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ মাত্র কয়েকটি ভাইরাস পরীক্ষার পদ্ধতি আছে। আর কোভিড-১৯-এর সময় করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়। অন্য কোনো ভাইরাস পরীক্ষার সক্ষমতাই আমাদের নেই। এ অবস্থায় শিশু দুটি কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল, তা আদৌ জানা যাবে কি না তা নিয়েই অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
জানতে চাইলে আইইডিসিআররের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তারা কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল তা এখনই বলা যাবে না। এ জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেই থাকবে। আইইডিসিআরের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম রাজশাহী যাচ্ছে। দলটি দ্রুতই রাজশাহী পৌঁছাবে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহম্মদ বলেন, ‘চার-পাঁচজনের এই বিশেষজ্ঞ দলটি আগামীকাল (সোমবার) হয়তো রাজশাহী এসে পৌঁছাবে। তারা হাসপাতালে আসবেন। পাশাপাশি এলাকায় যাবেন। লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন। পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করবেন। বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করবেন। নিশ্চয় আমরা জানতে পারব, কেন শিশু দুটির মৃত্যু হলো।’
সারাবাংলা/টিআর
২ বোনের মৃত্যু ২ বোনের মৃদ্যু টপ নিউজ নিপাহ ভাইরাস বরই খেয়ে মৃত্যু