কারাগারেই প্রাণ গেল পুতিনবিরোধী নাভালনির
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:৩১ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৫
রাশিয়ার প্রভাবশালী বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি দেশটির একটি কারাগারে মারা গেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনবিরোধী এবং সাম্প্রতিক সময়ে তার সবচেয়ে কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন নাভালনি।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের একটি কারাগারে নাভালনির মৃত্যু হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। রাশিয়ার একটি আদালত তাকে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০২১ সাল থেকে নাভালনি কারাবন্দি। গত বছরের শেষের দিকে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর কারাগার হিসেবে পরিচিত আর্কটিক পেনাল কলোনিগুলোর একটিতে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
ইয়ামালো-নেনেটস কারাগারের কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে অসুস্থবোধ করছিলেন নাভালনি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জরুরি চিকিৎসক দলকে ডাকা হলে তারা নাভালনির জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো চেষ্টাই আর কাজে আসেনি। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা নাভালনির মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করছেন।
নাভালনির আইনজীবী লিওনিড সলোভিয়ভ রুশ গণমাধ্যমকে জানান, তিনি এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে এই মৃত্যুর পেছনে রুশ কর্তৃপক্ষ দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন দের লিয়েন।
বৃহস্পতিবার সর্বশেষ নাভালনিকে দেখা গিয়েছিল। ভিডিও লিংকের মাধ্যমে তিনি কারাগার থেকেই আদালতে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
নাভালনির মা লুদমিলা নাভালনিয়া ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, সমবেদনা শুনতে চাই না। আমরা গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে দেখেছিলাম। সে প্রাণবন্ত, সুস্থ ও সুখী ছিল।
নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ছিলেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্বামীর মৃত্যুর বিষয়ে তিনি এখনো নিশ্চিত না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পুতিন ও তার সরকার অবিরাম মিথ্যাচার করে থাকে।’
ইউলিয়া বলেন, যদি তার মৃত্যুর খবর সত্য হয়, তাহলে পুতিন এবং তার বন্ধু, সরকারসহ পুরো দলবলকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে। আমাদের দেশ, আমার পরিবার, আমার স্বামীর সঙ্গে তারা যা করেছে, সেই দায় তাদের নিতেই হবে। এই আমাদের দেশ রাশিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যে ভয়াবহতা তারা ঘটাচ্ছে, তার দায় সরকার এবং পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবেও নিতে হবে।
গত এক দশকের মধ্যে নাভালনি রাশিয়ায় পুতিনবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। নিজেই ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে পুতিন সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন। পুতিনবিরোধীরা সাধারণত রাশিয়া ছেড়ে গেলেও নাভালনি যাননি। ২০২০ সালে তার শরীরে ‘নোভিচোক’ বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। জার্মানিতে চিকিৎসা নিয়ে ২০২১ সালে ফের তিনি দেশে ফেরেন। এর পরপরই তাকে কারাবরণ করতে হয়।
চরমপন্থি সংগঠন প্রতিষ্ঠার দায়ে নাভালনিকে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন রাশিয়ার একটি আদালত। এরও আগে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে তাকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সারাবাংলা/টিআর