শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ঢাবিতে সরস্বতীর আরাধনা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৬
ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী সরস্বতীর আরাধনা। ভক্ত-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণ।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অঞ্জলি দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম।
জগন্নাথ হলের মাঠজুড়ে মণ্ডপ আর মণ্ডপ। ভক্তকুলের উলু ধ্বনি, আর ঢাকির ঢোলে মুখরিত ছিল পূজা মণ্ডপ, ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় প্রসাদ। জগন্নাথ হলের মাঠের এককোণে থাকা একটি মণ্ডপে চোখ পড়তেই একটু ‘ভিন্নরকম’ কিছুর আঁচ পাওয়া গেল।
মণ্ডপটি মাঝে রাখা সরস্বতীর মূর্তিতে পেঁচিয়ে আছে একটি কাপড়। কাপড়ে লেখা—‘AI’ (এআই)। সরস্বতী দেবীর হাতে আছে একটি ‘গাইড’ বই। ঠিক পেছনে বেশ বড় জায়গা নিয়ে একটি ওএমআর শিটের ছবি। এর উপরে লেখা—‘মেধা = MCQ?’। ঠিক এর উপরেই আছে তারা আকৃতির একটি চিহ্ন। দুইপাশে বড় বড় করে লেখা দুটি বাক্য—‘লেখাপড়া করে যে-ই, অনাহারে মরে সে-ই’ এবং ‘বিদ্যালাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান’।
মণ্ডপের একদম উপরে একটি লম্বা কলম, যা পেঁচিয়ে আছে একটি শেকলে। ঠিক তার নিচেই লেখা—‘মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র’। এটি তৈরি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে। আশির দশকে সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমা থেকে উদ্ভুদ্ধ হয়ে এমন মণ্ডপের তৈরি।
পূজার আয়োজকদের একজন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শিশির দাস বলেন, ‘আমরা একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। সমসাময়িক অবস্থা নিয়ে একটু আর্টিস্টিক উপায়ে সাজানোর চেষ্টা করি। এবারও সেভাবেই করার চেষ্টা করা হয়েছে’।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়—দেবীর হাতে গাইড বই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থাকে নির্দেশ করে৷ দেবীর গায়ে পেঁচিয়ে থাকা ‘AI’ (এআই) লিখিত কাপড় মানুষের সৃজনশীলতা হারিয়ে যন্ত্রমুখী হওয়ার প্রতীক! ওএমআর শিটে এমসিকিউ-এর গোল্লা ভরাটেই কি মেধার পরিচয় পাওয়া যায়?—এই প্রশ্ন রাখার পাশাপাশি মণ্ডপের একদম উপরে কলমের গায়ে শেকল পেঁচিয়ে গণমাধ্যমের টুঁটি-চাপা পরিস্থিতির বয়ান উঠে এসেছে মণ্ডপে।
এই মণ্ডপটি ছাড়াও জগন্নাথ হলে আছে আরও ৭১টি মণ্ডপ। মূল মাঠে ৬৯টি, কেন্দ্রীয়ভাবে ১টি, হলের পুকুরে একটি ও কর্মচারীদের একটিসহ মোট ৭২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবার।
সরস্বতী পূজা ছাড়াও—একদিকে বসন্তের আগমন, সাথে জুড়েছে ভালোবাসা দিবস—সবমিলিয়ে যেন রঙে সেজেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কিংবা মলচত্বর —ক্যাম্পাসের চারপাশে যতদূর চোখ যায়, সব দিকেই যেন রঙের ছড়াছড়ি। পাঞ্জাবি-শাড়িতে তরুণ-তরুণিরা উদযাপন করছে বসন্ত আর ভালোবাসার দিন।
বিদ্যাদেবীর আরাধনা, পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। ক্যাম্পাসজুড়ে প্রিয়জন নিয়ে ঘুরছেন তরুণ-তরুণীরা। তরুণিদের মাথায় শোভা পাচ্ছে ফুলের বাহারি সাজ।
শাড়ি-পাঞ্জাবিতে অন্যরকম এক উৎসবের আমেজ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গিয়ে দেখা যায়—ছবি তোলায় ব্যস্ত তরুণ-তরুণিরা। আড্ডা-গল্পে মেতে আছেন সকলেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থী পূজা দেখে টিএসসি বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন৷ কথা হলে সারাবাংলাকে তারা বলেন, ক্যাম্পাসে এই দিনটি ‘মহা আনন্দের’!
তাদের একজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, সাথে পূজা—সব মিলিয়ে খুব ভালো একটি দিন তো বটেই। সব দিকেই রঙ। রঙে রঙিন ক্যাম্পাস দেখতে কার না ভালো লাগে!’
সারাবাংলা/আরআইআর/এনইউ