সরাসরি ভোটের জন্য নারীদের তৈরি হতে শেখ হাসিনার আহ্বান
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:১৪ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৬
ঢাকা: জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৩০০ সিটে আমাদের নির্বাচন উন্মুক্ত। সেখানে মেয়ে প্রার্থী পাওয়া বেশ কষ্টকর। আমরা চাই ভবিষ্যতে যেন আরও বেশি মেয়েদের সরাসরি ভোটে আমরা প্রার্থী করতে পারি।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নারীদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রত্যাশা, নমিনেশন না পেলেও যেন তারা হারিয়ে না যায়। সেভাবেই সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কারণ এই সমাজটা যখন আমাদের টেনে তুলতে হবে। সকলকে নিয়েই চলতে হবে। কাউকে অবহেলা করে নয়। এটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। আর মেয়েরা তো মোটেই অবহেলা করতে পারবে না। কারণ আমরা মায়ের জাতি। কাজেই মায়ের আন্তরিকতা দিয়ে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই যদি আমরা সমাজের দিকে তাকাই এবং যারা নেতৃত্ব দেবেন আমি নিজে যেমন চিন্তা করি যে এই বাংলাদেশটা তো আমার দেশ। এটা আমার পরিবার। মায়ের মমতা দিয়েই এই দেশটাকে গড়ে তোলা; সেইভাবে আমি চিন্তা করি। কাজেই আমি চাই আমাদের বোনেরাও সেইভাবে নিজেকে গড়ে তুলবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের সেবা করা; তার মধ্য দিয়েই কিন্তু আরও ভালো নেতৃত্ব গড়ে ওঠা যায়। ওই আন্তরিকতা ওই দরদটা না থাকলে শুধু আমি নিজে কী পেলাম পেলাম; সেই চিন্তা করলে কিন্তু কখনো নিজে উঠতে পারবে না বা কাউকে টেনে তুলতেও পারবে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই এই দেশটা আরও সামনে এগিয়ে যাক। এখন আমাদের একটা লক্ষ্য আছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। এখন আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকবে না, সব ক্ষেত্রেই অগ্রগামী থাকবে।
সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নারীদের কিন্তু অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমি জানি আমরা এত জনের মধ্যে দিতে পারবো মাত্র ৪৮ জন। কিন্তু যে যেখানে আছেন এই যে আপনাদের নেতৃত্ব দেওয়ার যে একটা আকাঙ্ক্ষা; এটা কিন্তু কখনো মানে নমিনেশন না পেলেও যেন হারিয়ে না যায়। এটা কিন্তু ধরে রাখতে হবে। এটা ধরে রেখেই নিজের স্থানটা নিজে করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, কেউ কিন্তু জায়গা করে দেয় না। জায়গাটা করে নিতে হবে এবং সেভাবেই সংগঠন তৈরি করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। কারণ আমাদের ৩০০ সিটে নির্বাচনটা কিন্তু উন্মুক্ত। সেখানে মেয়ে ক্যান্ডিডেট পাওয়া বেশ কষ্টকর। অনেকেই চান আমরা দেখি সবাই পারেন না। সেক্ষেত্রে আমরা চাই ভবিষ্যতে যেন আরও বেশি মেয়েদের সরাসরি ভোটে আমরা প্রার্থী করতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, একেবারে জনগণের কাছে তৃণমূলে যেয়ে কাজ করতে হবে। তাদের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। তাছাড়া মানুষের পাশে দাঁড়ালে মানুষের আস্থা বিশ্বাসটা অর্জন করা মেয়েদের জন্য আরও বেশি সুবিধা। এবারের নির্বাচনে সব থেকে বেশি সুবিধা হলো যে, আমাদের ক্ষেত্রে মেয়েরা অনেক বেশি ভোট দিয়েছে আমাদের। এক সময় কিন্তু এই অবস্থাটা ছিল না। এমনও কথা শুনতে হয়েছে যে আওয়ামী লীগকে কী ভোট দিবে, আওয়ামী লীগ ভোট পাওয়ার না। আবার কেউ কেউ ছিল জিজ্ঞেস করেছি, কাকে ভোট দেবেন? একটা নাম বলে বলেছে; সৌন্দর্য আছে। পরীর লাহান দেখায়। আমি কালাকুলা মানুষ আর পরীর লাহানও দেখাই না। ঐরকম সাজুগুজু করি না। কাজেই ভোট পাব কী? এখন কিন্তু তা না। এখন পরিবর্তন হয়ে বলছে হাসিনাকে ভোট দেব। এই পরিবর্তনটা এটা কেন এসেছে? আমার কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের মন জয় করে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদেরও নেতৃত্ব দিতে হলে কে কি বানিয়ে দেবে, আশায় বসে থাকলে হবে না। নিজের যোগ্যতায় নিজের কাজ করে নিজের আস্থা দিয়েই সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
নিজ দলের বিভিন্ন স্তরের নারী নেতাদের গণভবনে আসার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি। পাশাপাশি বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজি বসন্ত আমার গণভবনের বাগান ফুলে ফুলে শোভিত।
এবার সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশায় ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাসহ পেশাজীবী মিলে মোট ১৫৪৯ জন আগ্রহী ফরম সংগ্রহ করেছেন।
এবার আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের অংশের নারী প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ারও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার উপর ন্যস্ত করেছেন। তবে জাতীয় পার্টি তাদের ১১টি আসনে এককভাবে নির্বাচন করবে। তাই আইন অনুযায়ী জাতীয় পার্টি ২টি আসন এবং আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও তাদের ১৪ দলীয় জোট মিলিয়ে মোট ৪৮টি আসনে মনোনয়ন দিতে পারবে।
সারাবাংলা/এনআর/আইই