দুপুর গড়াতেই জমে ওঠে বইমেলা, ঘোরাঘুরিতেই আগ্রহ বেশি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৫৯ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:২৩
ঢাকা: বই কেনা হোক বা না হোক, এই একটি মেলার জন্য প্রায় সবারই অপেক্ষা বছরজুড়ে। সেই অমর একুশে বইমেলা প্রায় অর্ধেক সময় পার করে ফেলেছে। মেলা প্রাঙ্গণও জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির আগ্রাসনে বইয়ের প্রতি সবার আগ্রহ কমেছে বলে মনে হলেও বইমেলা নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই কারও। বরং দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে হতেই জমজমাট হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ মিলিয়ে গোটা বইমেলা।
প্রকাশকরা বলছেন, প্রযুক্তির উত্থানে দিন দিন বই পড়ুয়াদের সংখ্যা কমছে। তারপরও বইয়ের বিক্রি থেমে নেই। মেলার দর্শনার্থী সংখ্যার অনুপাতে বইয়ের বিক্রি কম না হলেও তা একেবারে মন্দ নয়।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলিয়ে বসেছে একুশের বইমেলা। এবার ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানের ৮৯২টি স্টল ও ৩৮টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে এই মেলায়। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগই স্টল দিয়েছে প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রম জানাতে। রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক, বেসরকারি সংস্থা, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্টলও।
আরও পড়ুন- নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন স্টল, বই কেনার চেয়ে ছবি তোলার ঝোঁক বেশি
বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ স্টল দিয়েছে বইমেলায়। তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প মানুষের কাছে তুলে ধরা। এই স্টলের কর্মী নায়েক আল ফয়সাল সারাবাংলাকে জানান, বর্তমানে ৩৩টি জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। ৬৪ জেলার ভ্রমণের স্থানগুলো লিফলেট আকারে প্রকাশ করছেন তারা। মেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের মধ্যে সেগুলো বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সবাইকে তারা সচেতন করছেন, পর্যটকরা যেন যেকোনো প্রয়োজনে পর্যটন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশদের সহযোগিতা নেয়।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টলে নিজেদের শিল্প-সংস্কৃতির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। স্টলের কর্মীরা জানান, দর্শনার্থীরা বই কেনার চেয়ে বই হাতে নিয়ে সেলফি তোলায় আগ্রহী বেশি। এরই মধ্যে অনেক বই ময়লা হয়ে গেছে। জানি না এসব বই পরিষ্কারভাবে নিতে পারি কি না।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মেলায় এসেছে দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন স্থান ও নিদর্শনের কথা জানাতে। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও নিদর্শনের বিবরণের সব বই রয়েছে তাদের স্টলে। সেখানকার কর্মী আকরাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের বইয়ের পাঠকের সংখ্যা একেবারেই কম। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও যারা এ ধরনের গবেষণায় নিয়োজিত, তারাই মূলত আমাদের পাঠক। আমাদের পাঠক যেহেতু নির্ধারিত, তাই বরাবরের মতোই বিক্রি হয়।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি স্টলও রয়েছে বইমেলায়। বর্তমানে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের লেখা বইগুলো রয়েছে এই স্টলে।
বইমেলায় রয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টলও। চীন, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশের স্টল রয়েছে। চায়না বুক হাউজে শিশুদের বইয়ের পাশাপাশি চীনের নানা শিল্প-সংস্কৃতির বই রয়েছে। চীনা নাগরিকদের সঙ্গে স্টলের কর্মীদের চাইনিজ ভাষাতেই কথা বলতে দেখা গেল। এদিকে জাপানিজ শিক্ষা ও কমিকের বই নিয়ে স্টল দিয়েছে সোর্স। সেখানে জাপানি কমিক মাংগা বইটি বেশ চলছে বলে জানালেন বিক্রয়কর্মীরা।
বইমেলায় ভিড় দেখা গেছে শিশুতোষ বইয়ের স্টলে। বিশেষ করে ম্যাজিক বুকগুলোর দোকানগুলোতে ভিড় বেশি দেখা গেছে। কিন্ডার বুকস থেকে বই কিনেছেন মোস্তফা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেলাতে নানা ধরনের বই পাওয়া যায়। সেজন্য প্রতি বছর বাচ্চার জন্য মেলা থেকে বই কিনে থাকি।’
মেলায় শিশুদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ দেখা গেল সিসিমপুরের স্টল ঘিরে। টিভি অনুষ্ঠানের কল্যাণে সিসিমপুর এবং এর বিভিন্ন চরিত্র শিশুদের কাছে ভীষণ পরিচিত। স্টলটি পুরোটাই সিসিমপুরের চরিত্র দিয়ে সাজানো বলে পুরোটা সময়জুড়েই সেখানে দেখা গেল শিশুদের ভিড়।
মেলায় দর্শনার্থীদের বই কেনার চেয়ে ঘোরাফেরা করে সময় কাটতেই বেশি দেখা গেল। কেউ আসছেন বন্ধুদের নিয়ে, কেউ পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে। ছুটির দিন না হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণ অনেকটা ফাঁকাই ছিল।
স্টলের কর্মীরা জানালেন, ছুটির দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। আগামী প্রকাশের কর্মী সীমা আক্তার বলেন, ‘মেলায় যারা আসছেন, অনেকেই বই কেনেন না। তবে বই হাতে নিয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করেন।’
একই কথা বললেন ঘাসফড়িংয়ের কর্মী আসাদ। তিনি বলেন, ‘বই কেনার চেয়ে ঘুরতে আর ছবি তুলতেই বেশি আসেন সবাই।’
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
অমর একুশে বইমেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ টপ নিউজ দৃষ্টিনন্দন স্টল বইমেলা বইমেলা ২০২৪