‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে’
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৭
ঢাকা: প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি, জাতি হিসেবে যে কলঙ্কের বোঝা আমাদের দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হয়েছিল। আজ সেই কলঙ্ক হতে আমরা মুক্ত। এই বিচারের সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।’
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, ‘আজ বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু কেবলমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হয়েছে— এমন ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নবীন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিভাবে সম্ভব হলো তার সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসররা ইতিহাস বিকৃতি করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে পথভ্রষ্ট করবে। তাই যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। আর সেই ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি তাতে কবীর চৌধুরীর ভূমিকার কথা উল্লেখ না করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন আইনি বিষয়ে অহেতুক প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। ইন্টারলোকেটরি আদেশের বিরুদ্ধে আপীল, ট্রাইব্যুনালের বিচারের স্বচ্ছতা ইত্যাদি বিষয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র দ্বারা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংঘটিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২’এ আজ পর্যন্ত মোট ৫৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অপর ৩০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালালের দোসররা কিন্তু আজও থেমে নেই। নানাভাবে তারা যুদ্ধপরাধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্র করছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার আছেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির নৈতিক ভিত্তি দুর্বল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এদের হাত থেকে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীও নিস্তার পাননি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রম এবং কমিটির নেতা হিসেবে তার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ঘাতক দালালের দোসরেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব তার নামে বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে।’
তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মূলত মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস