Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশ কর্মকর্তা সেজে ‘হিরোগিরি’, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৩ | আপডেট: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৩৮

গ্রেফতার ইশতিয়াক হোসাইন তানভীর। ছবি: ফেসবুক

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাবা ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা। ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যরা সবাই উচ্চশিক্ষিত। নিজে পড়েন বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘সঙ্গদোষে’ পেয়ে বসে ‘হিরোইজমে’র নেশায়। প্রথমে ফ্যান্টাসি থেকে পুলিশের পোশাক পরে ছবি দিতে থাকেন ফেসবুকে। শুরু করেন টিকটকও। একপর্যায়ে নিজেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার পরিচয় দিয়ে এবং পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতে পুরো নগরী ঘুরে ঘুরে শুরু করেন ‘হিরোগিরি’।

বিজ্ঞাপন

সড়কে গাড়ি আটকে ভয়ভীতি দেখানো, লোকজনকে জিম্মি করে হুমকিধমকি ও সর্বশেষ ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের অভিযোগও পাওয়া গেছে এই তরুণের বিরুদ্ধে। তবে এই নকল পুলিশ কর্মকর্তা জানতেন না, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্রে প্রকৃত পুলিশ তাকে অনুসরণ করছে। যতক্ষণে বুঝতে পারলেন, ততক্ষণে তিনি নগরীর খুলশী থানার হাজতে।

গ্রেফতার ইশতিয়াক হোসাইন তানভীরের (২২) বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের ছনদণ্ডী গ্রামে। বাসা নগরী খুলশী আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে ১৬ নম্বর ভবনে।

পুলিশের পোশাক পরা ছবি দিয়েই ‘হিরোইজম’ দেখাতেন তানভীর। ছবি: ফেসবুক

থানা থেকে আনুমানিক ২০০ গজ দূরত্বের ওই বাসা থেকেই মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ইশতিয়াককে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে হাজির হন খুলশী থানায়।

পুলিশ জানিয়েছে, ইশতিয়াকের বাবা প্রকৌশলী আবু তাহের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ইশতিয়াক প্রথমে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। পরে সেখানে ভর্তি বাতিল করে চট্টগ্রামে এসে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। এখন তিনি পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।

নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ফেসবুকে দেখতে পাই, একজন তরুণ পুলিশের পোশাক পরে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও আপলোড করেছেন। এসব কর্মকাণ্ড দেখে সন্দেহ হলে আমরা তার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করি। জানতে পারি, তার নাম ইশতিয়াক হোসেন তানভীর। তিনি পুলিশের পোশাক, র‌্যাংক-ব্যাজ, মাস্ক, ক্যাপ পরে ছবি ফেসবুকে দিলেও পুলিশের কোনো পর্যায়ের সদস্য নন।’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা তাকে ফলো করে দেখতে পাই যে তিনি পুলিশের স্টিকার সাঁটানো একটি প্রাইভেট কার নিয়মিত ব্যবহার করেন। আমরা তার গতিবিধি অনুসরণ করে ওই প্রাইভেট কারসহ তাকে আটক করি। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা সেজে প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন,’— বলেন বেলায়েত হোসেন।

পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণাসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে তার নামে। ছবি: ফেসবুক

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ইশতিয়াকের ব্যবহৃত নিজস্ব দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যেগুলোতে পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল। একটি গাড়ি তল্লাশি করে পুলিশের ক্যাপ, মাস্ক, সহকারী পুলিশ কমিশনার পদবি উল্লেখ থাকা ভুয়া আইডি কার্ডসহ আরও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

ইশতিয়াক হোসেনের ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে দেখা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি তিনি পুলিশের পোশাক পরা ছয়টি ছবি আপলোড করেন। সাদা রঙের একটি জিপের সামনে তিনি বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা এসব ছবি পোস্ট করেন।

পুলিশের পোশাক কীভাবে ইশতিয়াক পেলেন— জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, তার সঙ্গে একজন পুলিশ কর্মকর্তার সম্পর্ক ছিল। ওই কর্মকর্তার দেহরক্ষীর পোশাক পরে তিনি ছবিগুলো তুলেছেন। আর র‌্যাংক-ব্যাজ লাগানো ক্যাপগুলো কীভাবে সংগ্রহ করেছেন, তা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এদিকে ইশতিয়াককে গ্রেফতারের খবর পেয়ে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এক তরুণ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান খুলশী থানায়। তিনি নিজেকে ছিনতাইয়ের শিকার দাবি করে ইশতিয়াককে ছিনতাইকারী হিসেবে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেন। এ ছাড়া ইশতিয়াকের হাতে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীও থানায় হাজির হন। কয়েকজন নারীকে নিজের গাড়িতে তুলে ভয়ভীতি দেখানোর একটি ভিডিও-ও পুলিশ ইশতিয়াকের মোবাইলে পেয়েছে।

ওসি শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, ইশতিয়াক পুলিশ লেখা স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে নগরীতে ঘুরে বেড়াতেন। নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সড়কে গাড়ি আটকে ভয়ভীতি দেখাতেন। বিভিন্ন অজুহাতে লোকজনকে গাড়িতে আটকের ভয় দেখাতেন। এ ছাড়া নিজেকে ডিবি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগও আমরা পেয়েছি। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই চলছে।’

ওসি জানান, পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

কিশোর অপরাধ, আমাদের করণীয়
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০১

আরো

সম্পর্কিত খবর