হরিজন কলোনির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন: কাজ বন্ধ, মেয়রকে আলটিমেটাম
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:২৩ | আপডেট: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:২৪
যশোর: ১২ ঘণ্টার মধ্যে যশোর পৌরসভার রেল স্টেশন হরিজন কলোনির বিদ্যুৎ লাইন সচল করে না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পৌরসভার হরিজনরা। তবে পৌরসভার প্যানেল মেয়র বলছেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।
বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যশোর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন হরিজনরা। সেই মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হরিজন নেতারা আলটিমেটাম দেন।
যশোর পৌরসভা শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে রেল স্টেশন হেলা সমাজ ও বাজার হরিজন কলোনি, মনিহার তালতলা কলোনি, পুরনো পৌরসভা কলোনি ও ধর্মতলা কলোনির তিন শতাধিক হরিজন সদস্য দুই ঘণ্টা ধরে শহরের বিক্ষোভ মিছিল করেন।
পৌরসভার শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি মতি লাল বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার মধ্যে পৌরসভার রেল স্টেশনের হরিজনদের দুটি কলোনির বিদ্যুৎ লাইন সচল করে না দিলে যশোর পৌরসভার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম ঘোষণা করব।
বিদ্যুৎ বিল দেবেন না জানিয়ে মতি লাল বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের বাপ-দাদারা বসবাস করে আসছেন। তাদের কখনো বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়নি। প্রিপেইড মিটার মানেই আগে বিল দিয়ে তারপর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। পৌরসভা তো মাত্র তিন হাজার টাকা বেতন দেয়। বেতন না বাড়িয়ে মাত্র তিন হাজার টাকা দিয়ে আমসাদের সঙ্গে তামাশা করে! এ দিয়ে বিদ্যুৎ বিল কীভাবে দেওয়া সম্ভব?
এই শ্রমিক নেতা আরও বলেন, শুনেছি কয়েক কোটি টাকার বকেয়া বিল চাপবে। বিল দিলে দেবে পৌরসভা। এ নিয়ে কয়েকবার পৌর মেয়রের সঙ্গে কথাও বলেছি। এখানে প্রিপেইড মিটার লাগানো যাবে না, সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।
এদিকে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়ার প্রতিবাদে গত দুদিন কাজ বন্ধ রেখেছেন যশোর পৌরসভার হরিজনরা। শহরে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি মোড়েই ময়লার স্তূপ তৈরি হয়েছে। পশু-পাখি ময়লা ভাগাড় ঘেঁটে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব এলাকা কোনোমতে মুখচেপে পার হচ্ছেন সবাই।
শহরের রেলগেট তেতুলতলা এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা নেয়নি। পশু-পাখি ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।
আরেক বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। এসব ময়লা না নিয়ে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছাড়চ্ছে। এ কারণে শহরে চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে। পৌরসভার সঙ্গে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের যে সমস্যা, তা সমাধান হওয়া জরুরি।
যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরন লাল সরকার বলেন, বর্তমান মেয়র আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই রেল স্টেশন এলাকার হরিজন কলোনির বিদ্যুতের লাইন দুদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। প্রতিবাদে আমরা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতার সব কাজ বন্ধ রেখেছি। আমরা নিজেরা আলোচনা করেছি। সমস্যা সমাধান না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেবো।
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, পৌরসভার কোনো কোনো এলাকায় এনজিওকর্মীরা কাজ করেন, আবার কোনো কোনো এলাকায় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করেন। কিছু পরিচ্ছন্নতাকর্মী স্ট্রাইক করেছেন। কিন্তু তাদের তিন কলোনির বিলই বাকি শুধু সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। তাদের এ টাকা তো পৌরসভা পরিশোধ করবে না।
প্যানেল মেয়র আরও বলেন, হরিজনরা বলেছেন, তাদের দাবি না মানলে তারা ডাস্টবিনের ময়লা নেবেন না, রাস্তাও ঝাড়ু দেবেন না। তবে তারা যাই করুক, তাদের সঙ্গে কোনো আপসে যাওয়া হবে না। আমরা নিজেরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেব কী করা যায়।
সারাবাংলা/টিআর
টপ নিউজ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজ বন্ধ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন যশোর যশোর পৌরসভা হরিজন কলোনি