মিয়ানমার থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী বেড়ে ৬৮, বিজিবি শক্ত অবস্থানে
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:১৭ | আপডেট: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:১৮
ঢাকা: বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারে ভয়াবহ গোলাগুলির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তে শক্ত অবস্থান নিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বার্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সমুদ্রে টহল বাড়ানো হয়েছে কোস্টগার্ডের। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে পুলিশ বাহিনীকেও।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা গোলাগুলির ভয়াবহতায় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতের তথ্য অনুযায়ী বিজিবির ক্যাম্পে আশ্রয়প্রার্থী বিজিপি সদসস্যের সংখ্যা ৬৮ জন। এর বাইরেও মিয়ানমারের কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। বিজিবি জানিয়েছে, পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের ক্যাম্পে রাখা হয়েছে নির্দেশনা অনুযায়ী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা বলা যাচ্ছে না। কোনোভাবে বাংলাদেশের সীমান্তে আক্রমণ শুরু হলে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকতে হবে। এ কারণেই সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়ে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এর আগে বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুন- মিয়ানমারে বিদ্রোহী-সেনা সংঘাত, সতর্ক বাংলাদেশও
রোববার মধ্যরাতে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এক বার্তায় জানান, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ৬৮ জন সদস্য অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
বার্তায় বলা হয়, তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে আহত ১৫ জনের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এর আগে রোববার বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য ছিলেন ১৪ জন। ওই সময় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা যুদ্ধের জন্য নয়, আত্মরক্ষার জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।’ তবে সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না। তার মানে এই নয় যে আমাদের গায়ের ওপরে পড়ে গেলে আমরা ছেড়ে দেবো। আমরা সবসময় তৈরি আছি। সতর্ক রয়েছি।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তাদের ফেরত পাঠাতে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তবে যুদ্ধের সময় অন্য যদি এভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে, তাহলে তাদেরও আটক রেখে ফেরত পাঠাতে হবে। কেউ ঢুকে গেলে ফেরত পাঠানো ছাড়া তো আর কিছু করার থাকে না। তাই যে-ই প্রবেশ করবে, তাকেই আমরা আটক করে ফেরত পাঠাব।
মিয়ানমারে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন ও দলের সংঘাত চলছে গত কয়েকদিন ধরেই। এর মধ্যে গত কয়েক দিনে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সেই সংঘাতের আঁচ এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। দুই-তিন হলো ওই এলাকায় সীমান্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা তীব্র গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছেড়েছেন। সিময়ানমার থেকে গুলি এসে গ্রামগুলোতে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। রোববার গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে সীমান্তের পাঁচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যেই রোববার মিয়ানমারের বিজিপিসহ বেসামরিক নাগরিকদের বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা ঘটল।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
টপ নিউজ বাংলাদেশে আশ্রয় বিজিপি বিজিবি মিয়ানমারে সংঘাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী