স্বপ্নভঙ্গের হারে বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২০ | আপডেট: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৫
সেমিতে ওঠার পথে সুপার সিক্সে বাংলাদেশের সামনে ছিল জটিল সমীকরণ। নিজেদের দুই ম্যাচে জিতলেই শুধু হতো না, তাকিয়ে থাকতে হতো অন্যদের দিকেও। তবে সব সমীকরণ ছাপিয়ে শেষ ম্যাচে নিজেদের ভাগ্যটা নিজেদের হাতেই ছিল রাব্বিদের। সুপার সিক্সে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে বাগে পেয়েও জিততে পারল না বাংলাদেশ। বোলারদের সাফল্যের পর ব্যাটারদের ভরাডুবিতে পাকিস্তানের কাছে ৫ রানে হেরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশের যুবারা।
লক্ষ্যটা ছিল মাত্র ১৫৬। সেমিতে যেতে হলে অবশ্য ৩৮.১ ওভারের মাঝেই সেই টার্গেট পূর্ণ করতে হতো বাংলাদেশকে। শুরুটা বেশ আক্রমণাত্মকভাবেই করেছিলেন দুই ওপেনার। জিসানের দারুণ কিছু শটে মনে হচ্ছিল দিনটা আজ বাংলাদেশেরই হবে। কিন্তু তৃতীয় ওভারে সবার আগে ফেরেন তিনিই। ১২ বলে ১৯ রান করা জিসানকে ফেরান উবাইদ শাহ।
সেই শুরু। এরপর পরের দুই উইকেটও পড়েছে অল্প রানের ব্যবধানেই। টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা শিবলি ও রিজওয়ান আজ ব্যাট হাতে ব্যর্থ। শিবলি প্যাভিলিয়নে ফিরেছে মাত্র ৪ রানে, তাকে আউট করেছেন উবাইদ। ২০ রান করা রিজওয়ানকে আউট করেছেন আলি রাজা। প্রথম তিন ব্যাটারই ফিরেছেন উইকেটকিপার সাদ বেগের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
চতুর্থ উইকেটে আরিফুল ও আহরার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। দুজনের ২৯ রানের জুটিতে মনে হচ্ছিল এবার বোধহয় থিতু হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। কিন্তু স্লিপে হারুনের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ১১ রান করেই থামতে হয় আহরারকে। ৭ রানের মাঝে ফেরেন আরও দুই ব্যাটার। ১৪ রান করা আরিফুল ও ২ রান করা জীবন প্যাভিলিয়নে ফিরলে অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশের সেমিতে ওঠার স্বপ্ন।
৭ম উইকেটে আবারও বাংলাদেশকে আশার আলো দেখান জেমস-রাব্বি জুটি। ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিং করে দুজন যোগ করেন মহামূল্যবান ৪০ রান। যখন মনে হচ্ছিল এই জুটিই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাবে, তখনই ২৬ রান করে জেমসকে আউট করে ধাক্কা দেন উবাইদ। জেমস ফেরার পরের ওভারেই ১৩ রান করা রাব্বিকে ফেরান আলি, আর এতেই কার্যত শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন।
শেষ উইকেটে অবশ্য বর্ষণ-মারুফ জুটি অবিশ্বাস্য এক জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন। দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতেই শেষ ব্যাটার হিসাবে মারুফ আউট হলে শেষ হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা। অন্য প্রান্তে ২১ রান করে অপরাজিত থাকেন বর্ষণ। ৫ রানের জয় নিয়ে সেমিতে ওঠে পাকিস্তান।
দিনের শুরুতে টসে জিতে বোলিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। রহমত বর্ষণ আর শেখ পারভেজ জীবনের বোলিংয়ের সামনে পাকিস্তানের টপ অর্ডার আর মিডল অর্ডার ধসে পড়ে। যদিও মাত্র ৮৯ রানে ৬ উইকেট হারালেও শেষ দিকে এসে ১৫৫ রান তুলতে পারে পাকিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে ৪টি করে উইকেট নেন রহমত বর্ষণ এবং পারভেজ জীবন। এছাড়া একটি উইকেট নেন মাহফুজুর রাব্বি। পাকিস্তান ৪০.৪ ওভারে অল আউট হয়। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন আরাফাত মিনহাস।
শামিল হুসেন ও শাহজাইব খানের উদ্বোধনী জুটি ৮.৩ ওভারেই তুলে ফেলে ৩৭ রান। নবম ওভারের চতুর্থ বলটিতে মিডিয়াম পেসার রোহানাত দৌল্লাহ শামিলকে বোল্ড করতেই খুলে যায় উইকেটের দরজা। নিজের পরের ওভারেই তিনে নামা আজান আওয়াইসকে উইকেটকিপার আশিকুর রহমানের ক্যাচ বানান রোহানাত। ১৭তম ওভারে পাকিস্তানের অধিনায়ক সাদ বেগ যখন রানআউট হলেন দলটির স্কোর ৬৬/৩।
এরপর রান তুলতে হাঁসফাঁস করেছে পাকিস্তানিরা। ওপেনার শাহজাইব ২৪তম ওভারে অফ স্পিনার শেখ পারভেজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে যখন ফেরেন ২৩.৪ ওভারে দলটির রান ৪ উইকেট ৭৬। ৬৭ বলে ২৬ রান করেন শাহজাইব।পাকিস্তানের রান ৮৯ হতেই নেই আরও ২ উইকেট। আহমেদ হাসানকে আশিকুরের তৃতীয় শিকার বানিয়ে নিজেও তৃতীয় উইকেট পেয়ে যান রোহানাত। পারভেজ এরপর ফিরিয়ে দেন হারুন আরশাদকে।
পাকিস্তানের ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা হয় এরপরই। সপ্তম উইকেটে ৪৩ রান যোগ করেন আরাফাত মিনহাস ও আলী আসফান্দ। ৩৬তম ওভারে আসফান্দকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন পারভেজ। পরের ওভারে উবায়েদ শাহকে বোল্ড করে চতুর্থ উইকেট পেয়ে যান পারভেজ। রোহানাতও নিজের চতুর্থ উইকেট নিতে দেরি করেননি। ৪০তম ওভারে মোহাম্মদ জিশানকে বোল্ড করে এই মিডিয়াম পেসার। ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৪ রান করে আরফাত স্টাম্পড হতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস।
সারাবাংলা/এফএম