ফের সংগঠিত ‘হামকা গ্রুপ’, ছিনতাইয়ে নেমে ৫ জন ধরা
২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:৪১ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এক যাত্রীকে জিম্মি করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা এক যুগ আগে নগরীতে দাপিয়ে বেড়ানো দুর্ধর্ষ ‘হামকা গ্রুপে’র সদস্য। তারা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ওঁৎ পেতে থাকেন। নগদ টাকার বাহক— এমন যাত্রী পেলে অটোরিকশায় তুলে ভেতরে জিম্মি করে রেখে ছিনতাই করেন।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাত ১০টা পর্যন্ত টানা চার দিনের অভিযানে এই গ্রুপের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত দুটি অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি, দক্ষিণ) নোবেল চাকমা।
গ্রেফতার পাঁচজন হলেন— মো.বাবুল (৪০), মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু (৪০), মো. জসীম (৪২), মো. দেলোয়ার (৩৭) ও রফিকুল ইসলাম (৪৫)।
এক মাস আগে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে নগরীর চকবাজার থানার নার্সারি মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন অটোরিকশা যাত্রী মিজানুর রহমান নামে এক ঠিকাদার। তিনি নগরীর জিইসি মোড়ে আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুলে অটোরিকশায় করে টাইগারপাসে নগর ভবনে যাচ্ছিলেন। ছিনতাইয়ের ঘটনায় পরদিন তিনি চকবাজার থানায় মামলা করেন।
এডিসি নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে জানান, মিজানুর রহমানকে বহনকারী অটোরিকশা নার্সারি মোড়ে গিয়ে হঠাৎ থেমে যায়। চালক নেমে গাড়ি মেরামতের জন্য টুলবক্স লাগবে জানিয়ে তাকে গ্রিলের দরজা খুলতে বলেন।
মিজানুর দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে চালক দ্রুত উঠে তার পাশে বসে যান। পেছন থেকে আরও দুজন এসে একজন তার কোলের ওপর এবং আরেকজন পাশ বসে পড়েন। একপর্যায়ে চলন্ত গাড়িতে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা কেড়ে নেন। এরপর তাকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে সিআরবিতে রেলওয়ে স্কুলের পাশে একটি নির্জন স্থানে নামিয়ে দেন।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে চকবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দুটি অটোরিকশা শনাক্ত করে। এর সূত্র ধরে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয় বলে এডিসি নোবেল চাকমা জানান।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে বাবুলকে গত ১৮ জানুয়ারি নগরীর চান্দগাঁও থানার খাজা রোড থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে রাহাত্তারপুল থেকে একটি অটোরিকশা জব্দ করা হয়।
বাবুলকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু ও জসীমকে বন্দর থানা এলাকা থেকে রোববার (২১ জানুয়ারি) গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে তারা জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন।
এরপর তাদের তথ্যে রাত ১০টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে রফিকুল ও বায়েজিদ এলাকা থেকে দেলোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। রফিকুলের তথ্যে হালিশহর থেকে আরেকটি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি জানান, যাত্রী মিজানুর রহমানকে বহনকারী অটোরিকশা চালাচ্ছিলেন মিঠু। পেছনে আরেকটি অটোরিকশায় করে বাকি চারজন সেটিকে অনুসরণ করছিল, যেটি চালাচ্ছিলেন বাবুল।
‘প্রথম অটোরিকশা থামানোর পর পেছনেরটিও থেমে যায়। যাত্রী দরজা খোলার পর চালক মিঠু দ্রুত উঠে তাকে জিম্মি করেন। পেছনের গাড়ি থেকে দেলোয়ার ও জসীমও উঠে যাত্রীকে জিম্মি করেন। রফিকুল গাড়ি চালিয়ে এগোতে থাকেন। পেছনে ব্যাকআপ গাড়ি নিয়ে বাবুল তাদের অনুসরণ করতে থাকেন,’— বলেন ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর।
তিনি আরও জানান, এ ছিনতাইকাণ্ডের মূল নেতৃত্বদাতা মিঠু। তিনি একসময় হামকা গ্রুপের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ ছিলেন। পাঁচ মাস আগে জেল থেকে বেরিয়ে গ্রুপের নিষ্ক্রিয় সদস্যদের সক্রিয় করেন এবং আগের মতো ছিনতাই শুরু করেন।
‘হামকা গ্রুপ যে স্টাইলে ছিনতাই করত, সেই একই প্রক্রিয়া আবার শুরু করেন। ব্যাংক কিংবা নগদ লেনদেন হয়— এমন বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ঘোরাঘুরি করেন। সুযোগ বুঝে যাত্রী তুলে জিম্মি করে ছিনতাই করেন,’— বলেন ওসি।
গ্রেফতার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় অস্ত্র আইনে ও ডাকাতি-ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিক মামলা আছে বলেও ওসি জানান।
এর এক যুগ আগে চট্টগ্রাম শহর দাপিয়ে বেড়াতেন ছিনতাইকারী দল হামকা গ্রুপের সদস্যরা। গলায় গামছা পেঁচিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে দুর্বল করে ছিনতাই করা ছিল তাদের কৌশল। ২০১৭ সালে হামকা গ্রুপের মূল নেতা নুর আলম গ্রেফতারের পর দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। এরপর হামকা গ্রুপ ভেঙে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর