Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভোট বর্জন করায় জনগণকে শায়েস্তা করতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৪

ঢাকা: ভোট বর্জন করায় জনগণকে শায়েস্তা করতে হঠৎ দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘বাজারদরের ভয়াবহ অবস্থা। সম্ভবত ভোট বর্জনের কারণে জনগণকে শায়েস্তা করতে নির্বাচনের পরই ঘুষখোর, মুনাফাখোর, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে সমর্পন করেছেন শেখ হাসিনা। শপথের পরের দিনই চালসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করা অভিসন্ধিপ্রসূত। ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে বর্তমানে মোটা চালের দাম ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের লোকেরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতে চালের দাম বাড়াচ্ছে। যাকে খাদ্যমন্ত্রী করা হয়েছে তিনি চাল মিলের মালিক। খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাঁচ দিন আগে খাদ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আনতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। বাজারে দায়সারা তদারকির নামে চুনোপুঁটি ধরতে ব্যস্ত প্রশাসন। রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হলো, কোনো চেষ্টায় কাজ হবে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙবে না। সংসদের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী। মজুতদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী সব সরকারের লোক।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সরকারের টপ টু বটম সিন্ডিকেট করে দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে। জনগণ চরম অসহায়। দ্রব্যমূল্য না কমলে মানুষ বাঁচবে না। কারণ, আয় বাড়েনি। যে শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা ছিল, এখন ৭০০ টাকা দিলেও তাদের পোষায় না। তারা বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারেন না। তারা ইলিশ মাছ, গরুর মাংস খেতে পারে না। বেগুন খাবে, সেটাও হয় না। এক দেড় বছর আগে চিনির দাম ছিল ৮৮ থেকে ৯০ টাকা। এখন তা ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। ডিমের হালি এখন ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। শীতের বাজারে ভরা মৌসুমেও ১০০ থেকে ১৫০ টাকার নিচে কোনো সব্জি পাওয়া যাচ্ছে নাা। আগে তারা বলেছিল আলু খেতে, কিন্ত এখন চালের চেয়েও আলুর দাম বেশি।’

রিজভী বলেন, ‘গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, রুই মাছ সবকিছুর দাম বেড়েছে। নির্বাচনের আগে গরুর মাংস কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা করা হয়েছিল ভোটারদের তুষ্ট করতে। কিন্তু এখন সেই গরুর মাংস এক লাফে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক দিনেই খামারে গরুর দাম বেড়ে গেল? সিন্ডিকেট করে যে সবকিছুর দাম বাড়ানো হয় গরুর মাংস তার বড় উদাহরণ। কত রকমের প্রতারণা জানে এই সরকার।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ার বাজার লুট করে। ১৯৯৬, ২০১০ সালে শেয়ার বাজার কারসাজি করে লাখ কোটি টাকা লোপাট করেছে তারা। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথের ফকির করেছে। আবার শুরু হয়েছে কারসাজি। আবারও শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে। দীর্ঘদিন মার্কেটকে ধরে রাখা ফ্লোর প্রাইস হুট করে তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নেই, কিন্তু লুটপাটের টাকা আছে শেখ হাসিনার উপদেষ্টাসহ আওয়ামী নেতাদের কাছে। বিএসইসির এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্তে আবারও অসংখ্য বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

রিজভী বলেন, ‘জনগণকে উপেক্ষা করে জনপ্রতিনিধিত্বহীন একনায়ক সরকার যেকোনো উপায়ে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন জোগাড়ে ব্যস্ত। দেশে দেশে ধর্না দিয়ে কাকুতি-মিনতি করছে তারা। ডামি ভোটের নকল সরকার হীনমন্যতায় ভুগছে। ধর্না দিয়ে অভিনন্দন বার্তা আনা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। লুটের টাকায় কেনা অভিনন্দনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা বড় হাস্যকর।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের এই একদলীয় পাতানো নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া সেটিরই প্রমাণ। সুতরাং ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বিতীয় বাকশাল সরকারের বৈধতা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জনগণ এই নির্বাচন, এই অবৈধ সংসদ কখনও মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ডামি সরকারের পতন ঘটাবে।’

রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনি প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত সরকার বিএনপিকে দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশকে পরাজিত করে ফেলেছে। গ্যাসের অভাবে একদিকে বাসাবাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলছে না, অপরদিকে একের পর এক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গ্যাসের অভাবে গাজীপুরে অর্ধেক শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার সংবাদটি আজকের গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। চট্টগ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ।’

তিনি বলেন, ‘একদিকে অর্ধাহার-অনাহার, অপরদিকে হাড় কাঁপানো শীতের যাতনা। অবৈধ ক্ষমতার দাপটে ফ্যাসিবাদী সরকার উষ্ণতা অনুভব করলেও শীতে কাতর মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনগণের প্রতি দখলদার সরকারের ন্যূনতম ভ্রূক্ষেপ নেই। যেহেতু নিপীড়ক শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, সেহেতু তিনি জনগণকে বেঁধে রাখতে চান স্বৈরশৃঙ্খলে।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

টপ নিউজ বিএনপি রুহুল কবীর রিজভী

বিজ্ঞাপন

লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১২

আরো

সম্পর্কিত খবর