Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কলেবরে বাড়ছে না বইমেলা, পরিচালনায় এবার একাডেমি নিজেই

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:০৭ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৫

আর দুই সপ্তাহ পরেই বইমেলা। তারই প্রস্তুতি চলছে সোহাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

ঢাকা: দু’সপ্তাহ পরই শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪, এককথায় যা বইমেলা হিসেবেই পরিচিত। বাংলা একাডমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান— দুই অংশেই চলছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। তবে এখনো সে প্রস্তুতি চলছে একটু ধীরে, ঢিমেতালে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই অবশ্য বাঁশের কাঠামোগুলো স্টলের আকার নেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছর মেলার বিন্যাসে থাকছে না বড় কোনো পরিবর্তন। প্যাভিলিয়নের সংখ্যা বাড়ছে না একেবারেই। স্টলের সংখ্যাও সামান্য দুয়েকটা বাড়তে পারে। এর সঙ্গে এবার মেলা পরিচালনার কাজ একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজের হাতেই রাখছে। বিগত বছরগুলোর মতো এই কাজ কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দেওয়া হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত বাংলা একাডেমি নিজেই মেলা পরিচালনা করত। এরপর গত বেশ কয়েক বছর ধরে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হয়েছে সেই দায়িত্ব। এবার ফের সেই দায়িত্ব একাডেমি নিজেই পালন করবে।

বাংলা একাডেমির মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমরা নিজেরাই স্পন্সর নিয়ে মেলা পরিচালনা করব। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো কাজে অনেক ঘাটতি রেখে দেয়। ফলে আমাদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তাই এবার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ৭০ শতাংশ কাজ আমরা সেরেও ফেলেছি।’

এখনো বাঁশ দিয়ে স্টলের মূল কাঠামো নির্মাণের কাজই চলছে সবখানে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

অন্যদিকে বিতর্ক থাকলেও এবারও খাবারের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বইমেলা প্রাঙ্গণে। তবে সেক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে ‘চুলা না জ্বালানোর’ শর্ত। মেলাকে কেন্দ্র করে মেট্রোরেল চলাচলের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি কয়েকটি মহল তুললেও সেটি একাডেমির ‘কনসার্ন’ নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির প্রশাসন মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক এবং মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। এবারের মেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যায় খুব পরিবর্তন নেই উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) স্টল বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। ৩০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে মেলার সার্বিক তথ্য।

গত বইমেলায় প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৮টি। মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন করে কোনো প্যাভিলিয়ন কিংবা স্টলের সংখ্যা বাড়ানো হবে না। গতবার যা ছিল, এবারও তাই থাকবে। এটি পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত। তবে স্টলের জন্য নতুন করে ৭৭টি আবেদন পড়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে স্টল দেওয়া হতে পারে।’

প্রকাশনীগুলো জানাচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই স্টলগুলো আকার পেয়ে যাবে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

এদিকে মেলার সময় ঘনিয়ে এলেও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান— দুই অংশেই প্রস্তুতির কাজ চলতে দেখা যায় ঢিমেতালে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বইমেলার মূল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকপাড়, মুক্তমঞ্চ ও কালী মন্দিরসংলগ্ন জায়গায় বাঁশের সারি-সারি খুঁটি বসেছে। প্রাথমিক কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। কয়েকদিন পরই কাঠ-বোর্ড বসিয়ে তৈরি করা হবে প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোর মূল কাঠামো।

বাংলা একাডেমির ভেতরেও দেখা গেছে একই চিত্র। তবে একাডেমির ভেতরে পুরাতন ভবনের পূর্বপাশে পাঠক-লেখকদের মঞ্চের জন্য বরাদ্দ করা স্থানে প্রাথমিক কাঠামোর তৈরির কাজ শেষ হলেও অন্য জায়গাগুলোতে কাজ শুরুই হয়নি এখনো।

মেলার প্রস্তুতি চলছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও, যেখানে মূলত স্টল বসে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি সংস্থার। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

গতবার মেলার বিন্যাসে আনা হয়েছিল ব্যাপক পরিবর্তন। পাঠক-দর্শনার্থীদের স্টল চিনতে সুবিধা করে দিতে স্টলগুলো সাজানো হয়েছিলো জ্যামিতিক প্রক্রিয়ায়। এবারও স্টল বিন্যাসে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন নেই বলে জানিয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম। তবে লিটল ম্যাগ চত্বরের জায়গা পরিবর্তন করে সরিয়ে নেওয়া হবে অন্য পাশে। আর গতবার টিএসসিসংলগ্ন উদ্যান হয়ে প্রবেশ করে বাম পাশে থাকা স্টলগুলোর জায়গা পরিবর্তন করে আনা হচ্ছে ডানপাশে ঝরনার কাছে।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লিটল ম্যাগ চত্বর জায়গা বদলে গতবার ফায়ার সার্ভিসের জন্য বরাদ্দ করা জায়গায় আসবে। আর প্রকাশক সমিতিসহ কয়েকটি অংশ অভিযোগ করেছে, টিএসসিসংলগ্ন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে বামপাশে দর্শনার্থী ও পাঠকরা যেত না। এ কারণে ওই পাশের স্টলগুলোকে এবার ডানদিকে ঝরনার কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অল্প পরিবর্তন থাকলেও কোনো পরিবর্তন নেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ অংশে। মেলার এই অংশে সাধারণত সরকারি-বেসরকারি ও এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থাকে। এই অংশে কোনো পরিবর্তন থাকছে না এবারও।

বাংলা একাডেমি বলছে, এ বছর মেলার পরিসর খুব একটা বাড়ছে না। অর্থাৎ স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা প্রায় গত বছরের সমানই থাকছে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

এদিকে শুরুতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বইমেলায় খাবারের দোকান না রাখার নির্দেশনা ছিল। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের কথা বিবেচনায় রেখে মেলার মূল অংশ থেকে কিছু দূরে খাবারের দোকান স্থাপনের সিদ্ধান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো দোকানেই থাকবে না আগুনের ব্যবহার।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিশু ও বৃদ্ধরা মেলায় আসেন। তাই আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি, খাবারের দোকানের প্রয়োজন আছে। তবে এবার মেলার মূল অংশ থেকে দূরে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটসংলগ্ন গেটের কাছে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোনোভাবেই উনুন জ্বালানো যাবে না।’

গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চালু হয়েছে। তবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়— কেবল সকালে চালু থাকে এই স্টেশন। বইমেলা ঘিরে এই মেট্রো স্টেশনটি দিনভর চালু রাখার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ বিরতির পর এবার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বদলে বাংলা একাডেমি নিজেই মেলা পরিচালনা করবে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

গত রোববার সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বইমেলার সময় রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে মেট্রোরেল চালু থাকুক।’ তার দাবির সঙ্গে একমত আরও অনেকেই। অন্যরাও একই দাবি জানিয়েছেন।

তবে এটি ‘একাডেমি কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয় নয়’ বলে জানাচ্ছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়াবে কি না— এই কনাসার্ন বাংলা একাডেমির নয়। মেট্রোরেল স্টেশনের প্রবেশ পথে যেন ভিড় না হয়, সে জন্য ওই অংশের প্রবেশপথটি আমরা একটু সরিয়ে এনেছি, এটুকুই। মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ানো হবে কি না, সেটি সরকার বা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের বিষয়। সরকারই ভালো বুঝবে।’

সারাবাংলা/আরআইআর/এমও/টিআর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা বইমেলা বইমেলা ২০২৪ বাংলা একাডমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর