‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে জনগণের কল্যাণে’
১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৪
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা নির্বাচন করেছি; কেউ জিতেছে, কেউ হেরেছে। অনেকের হয়তো কষ্ট আছে, কারও আনন্দ আছে। কিন্তু আনন্দ দুঃখ-কষ্ট-হাসি-কান্না সবকিছু মিলেই আমাদের চলতে হবে। সবাইকে এক হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে জনগণের কল্যাণে। মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি সেটা যেন কোনোমতে হারিয়ে না যায়।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর আজ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন দলটির সভাপতি।
যৌথসভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পার্টি। এ পার্টিই তো আসল। আওয়ামী লীগ যদি ১৯৮১ সালে আমাকে না আনতো, আর না ডাকতো; তাহলে তো আমার আসা হতো না। তাহলে হয়তো আমি দেশের এই দায়িত্ব নিতেও পারতাম না।’
আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো একটা শক্তিশালী সংগঠন আমার সঙ্গে আছে বলেই এবারের নির্বাচনে জনগণের সমর্থন, বিশ্বাস ও আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। কারণ, গ্রামের সাধারণ মানুষ কিন্তু আওয়ামী লীগকেই বিশ্বাস করে। অন্য কারও প্রতি তাদের আস্থা নাই, বিশ্বাস নাই। কাজেই তাদের আকাঙ্ক্ষাটা আমাদের পূরণ করতে হবে। আমাদের মাথায় এটা সবসময় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষটা, খেটে খাওয়া, গরিব কৃষক-শ্রমিক-রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুরের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন করব, তাদের জীবনমান কীভাবে উন্নত করব- সেটাই আমাদের মাথায় সবসময় রাখতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন। সেইভাবেই দলের নেতাকর্মীদের চলার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, সাভায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক নিবেদনসহ মন্ত্রিপরিষদের সভায় অংশগ্রহণের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অফিসে তো আমাকে অবশ্যই আসতে হবে। কারণ, এটাই তো আমার মূল শিকড়। এখন সেই জায়গায় এসেছি। আমি হয়তো সবাইকে নিয়ে গণভবনে বসতে পারতাম। কিন্তু আমি বলেছি, আমার আওয়ামী লীগ অফিসে একবার আসতেই হবে। কারণ, এখান থেকে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম সবকিছু শুরু। আমাদের অনেক স্মৃতি এখানে জড়িত।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগ সভাপতির হাল ধরার স্মৃতিচারণ করেন এবং যারা বেঁচে নেই সেইসব নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দল হচ্ছে সব থেকে বড়। সংগঠনটা যদি পাশে না থাকে কোনো অর্জন সম্ভব হয় না। প্রতিটি সাফল্যের পেছনে একটা শক্তি দরকার। আমার শক্তি বাংলাদেশের জনগণ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সহযোগী সংগঠন আর দলটা আছে বলেই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। প্রশাসনিকভাবে যত কাজই করি না কেন শক্তিশালী সংগঠন আর মানুষ যদি পাশে না থাকে তাহলে সাফল্য আনা মুশকিল হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা করতে পারি একটাই কারণে। আমাদের অফিসিয়ালগুলোর পাশাপাশি সংগঠন আছে। এই সংগঠন যখন দাঁড়ায় তখনই সাফল্য আসে- এটাই হলো বাস্তব কথা।’
এ সময় তিনি বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দিকেও নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ট্রেনে আগুন দিয়ে মা-সন্তানকে পুড়িয়ে মারে, যারা বাসে আগুন মানুষ দেয়, ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ মারে, সিএনজিতে আগুন দিয়ে মানুষ মারে; সেই অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের মিথ্যাচার আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। সেজন্যই তাদের জনগণ এবার প্রত্যাখান করেছে। জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা লিফলেট বিলি করেছে। তারা লিফলেট যত বেশি বিলি করেছে মানুষ ততবেশি ভোট কেন্দ্রে গেছে। এটাই হলো বাস্তব কথা। কারণ, তাদের কথায় কোন সাড়া মানুষ দেয়নি, কেউ না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘কাজেই মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আমাদের ধরে রাখতে হবে। যারা নির্বাচন বন্ধ করতে চায় তারা গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় না। যারা গণতন্ত্র চায় না তারা তো দেশের শক্র, জনগণের শত্রু। সেজন্যই জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে।’ কাজেই তাদের কথা ছেড়ে দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম