প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ২৮৫ প্রতিবন্ধীকে নিয়োগের নির্দেশ
১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩১ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৩
ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২৮৫ প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে কোটার ভিত্তিতে (১০ শতাংশ) নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রিটকারী ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে পৃথক চারটি রিটের ওপর জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রোববার (১৪ জানুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
এর আগে, ২৮৫ শারীরিক প্রতিবন্ধীর পৃথক চারটি রিটের রুল শুনানি একটি বেঞ্চে করার জন্য গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি বরাবরে আবেদন করেন রিটকারীরা। এরপর প্রধান বিচারপতি পৃথক চারটি রিট শুনানির জন্য বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
এর আগে, গত বছরের ১৭ জানুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী কোটায় বিভিন্ন উপজেলায় ১১৪ সহকারী শিক্ষক পদ সংরক্ষণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রতিবন্ধী কোটায় কেন তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে না- তা জানতে রুল জারি করেন আদালত। এরপর আরও ১৭১ প্রতিবন্ধী প্রার্থী পৃথক তিনটি রিট দায়ের করলে আদালত একইভাবে রুল জারি করেন।
রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে (ডিজি) বিবাদী করা হয়।
মো. মাহাবুব শেখ, মো. আবু জাহিদ, ফাহিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পার্থ প্রতীম, শাজাহান শেখ, মো. মনোয়ার হোসেন, মো. আজিজুল ইসলাম, বৃষ্টি রানি রায়, মো. সাজ্জাদ হোসেন সাজু ও মো. নূর আলমসহ বিভিন্ন জেলার ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী প্রার্থী গত বছরের বিভিন্ন সময়ে এই রিটগুলো দায়ের করেন।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, রিট আবেদনকারীরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে প্রকাশিত ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। পরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন।
কিন্তু উক্ত নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় সেখানে কোনো প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সুযোগ প্রদান করা হয়নি। অথচ, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) কর্তৃক জারিকৃত ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চে পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করার বিধান রয়েছে এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর ৮ এর ২ বিধিতে বলা হয়েছে “উপ-বিধি (২) এর দফা (গ) তে উল্লেখিত মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে, আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোনো বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকিলে উক্ত কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ করিতে হইবে”।
এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩৫ এর ১ এ বলা হয়েছে “আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যোগ্যতা থাক সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী, উপযোগী কোন কর্মে নিযুক্ত হইতে কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তাহার প্রতি বৈষম্য করা বা তাহাকে বাধাগ্রস্ত করা যাইবে না”। পাশাপাশি আমাদের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদের ৪ এ বলা হয়েছে, ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’
কিন্তু বিধি মোতাবেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার বৈধ অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও উপরিউক্ত সকল আইনকানুন অবজ্ঞা করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ‘নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৮ এবং ২০২০’ এর চূড়ান্ত ফলাফলে কোনো প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এ কারণে ২৮৫ প্রার্থী হাইকোর্টে পৃথক চারটি রিট করেন। সেসব রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০২০ এর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে রিটকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ না দেওয়া কেন অবৈধ হবে না এবং ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে রিটকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
আজ সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২৮৫ প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া আরও বলেন, ‘এই রায়ের ফলে রিটকারী প্রতিবন্ধী নিয়োগ প্রার্থীগণ ন্যায় বিচার পেয়েছেন। আমি আশা করছি কর্তৃপক্ষ অনতিবিলম্বে এই রায় বাস্তবায়ন করে রিটকারীদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ