Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওসিকে এমপির হুমকি— তদন্ত চলছে বলে জানালেন এসপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:০৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকির অভিযোগের তদন্ত অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ। তদন্ত শেষে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি ‘যেভাবে’ বলবে, সেভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে বাঁশখালী উপজেলা সদরে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান এসপি। এর আগে, তিনি বাঁশখালীতে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে ‘বাঁশখালীর ওসিকে এমপি মোস্তাফিজুরের হুমকি’র বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, ‘বিষয়টি আপনারা যেমন অবগত আছেন, আমরাও আছি। তবে সবকিছু আইন অনুযায়ী চলে। হুমকির বিষয়ে ইতোমধ্যে আমি লিখিত প্রতিবেদন রিটার্নিং অফিসারকে দিয়েছি। রিটার্নিং অফিসার সেটি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি সেটার অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। তারা অনুসন্ধান করে যে প্রতিবেদন দেবে এবং তারা যেভাবে বলবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। মজিবুরের অনুসারীদের মামলা নেওয়ায় গত ২২ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে মোবাইলে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন মোস্তাফিজুর।

বিজ্ঞাপন

২৪ ডিসেম্বর এসপি এস এম শফিউল্লাহ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন দেন। ওইদিনই বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রতিবেদন নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এছাড়া নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংবাদিককে মারধরের মাধ্যমে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইতোমধ্যে আদালতে মামলা দায়ের করেছে নির্বাচন কমিশন।

প্রার্থীদের কেউ কেউ মনে করছেন, বাঁশখালীতে ‘২০১৪-২০১৮ স্টাইলে’ নির্বাচন হবে- সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যে এসপি এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা শেষপর্যন্ত শক্ত অবস্থানে থাকব। ব্যালট ছিনতাইয়ের কোনো ‍সুযোগ নেই, কেন্দ্র দখলের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন বলেছে, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা হলে সেই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হবে। একাধিক কেন্দ্র দখলের চেষ্টা হলে সব কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দিয়ে পরবর্তী সময়ে সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুতরাং নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে।’

এসপি বলেন ‘প্রার্থীরা সবাই একবাক্যে বলেছেন, বাঁশখালীতে বড়ধরনের কোনো সমস্যার উদ্ভব এখনও হয়নি। সেনসিটিভ এরিয়ায় ফোর্স বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে বুথ কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া এবং দুর্গম এলাকায় ভোটারদের যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো আমরা বিবেচনায় নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বাঁশখালীতে আমরা যে পরিমাণ ফোর্স রেখেছি, তার দ্বিগুণ ফোর্স দেওয়া হবে। কেউ যাতে ভোটের পরিবেশ বিরূপ করতে না পারে, উসকানিমূলক কোনো কথা না বলে সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট আছি। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যারা ভোটারদের হুমকিধমকি দিচ্ছে, তাদের কাউকে কাউকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের বলছি- এ পথ থেকে সরে আসুন, অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে এসপি বলেন, ‘সবাইকে বলেছি, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করতে হবে। বিন্দুমাত্র পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার সবাই মিলে আমরা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য দায়িত্ব পালন করব। সেনসিটিভ এলাকার তালিকা আমরা করেছি। নির্বাচন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি, কোনো বিরূপ পরিবেশ তৈরি হবে না। কোনো নাশকতার সুযোগ নেই। ভোটাররা নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসবে এবং ভোট দিয়ে চলে যাবে। ভোটাররা যাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন, তিনিই হবেন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি।’

নাশকতা মামলার আসামিদের নিয়ে একজন প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন, এমন অভিযোগ পাবার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযান শুরু হবে। অবৈধ অস্ত্রধারী কাউকে পেলে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। ২/১ দিনের মধ্যেই কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে, সবাই দেখতে পাবেন।’

মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

সাংবাদিককে ফোন করে গালিগালাজ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, সাংসদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, বাঁশখালীতে নিজ দলের বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলসহ নানা কারণে তিনি বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।

একই আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

এমপি এসপি ওসি টপ নিউজ হুমকি

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর