জ্ঞানভিত্তিক-উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি আ.লীগের
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৯ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৮
ঢাকা: ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ করার অঙ্গীকারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’স্লোগান নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করল আওয়ামী লীগ। টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধিগত ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে এই ইশতেহারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও ইশতেহার ঘোষণা করে দলটি। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণাকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বও করেন তিনি।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন। এরপর ভিডিও ডকুমেন্টারি ‘জার্নি টু বাংলাদেশ’প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য এবং ইশতেহার উপস্থাপন করেন তিনি।
আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এবারও নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করে দলটি।
২০৪১-সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে চার মূল স্তম্ভ হিসাবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ করার অঙ্গীকারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের অঙ্গীকারে সাশ্রয়ী, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধিগত, উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
এর আগে, নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অভিযাত্রায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে কৃষি, সেবা ও শিল্পোৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার রয়েছে।
এর আগে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই ইশতেহারে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ বদ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের সনদ’ নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। সেই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের স্লোগান ছিল– ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। অন্যান্য প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অগ্রাধিকার হিসেবে ১০টি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের স্লোগান ছিল– ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এতে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে ‘নিরাপদ বদ্বীপ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ। ছোটখাট অভিঘাত আজ আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’
আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করেছি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনি ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের দ্বাদশ নির্বাচনি ইশতেহার পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার একটানা ১৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকায় আমরা বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে বিজয়ী হয়। আর বিএনপি এককভাবে মাত্র ৩০টি আসনে জয়ী হয়। বাকি আসনগুলো উভয় জোটের শরিকেরা পায়।’
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা রূপকল্প-২০২১-এর ঘোষণা দিয়েছিলাম। দিন বদলের সনদ হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করি। এরপর শত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ২০১৪ ও ২০১৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আমরা সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছি।’
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত থাকা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ। ছোটখাট অভিঘাত আজ আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। করোনা মহামারিসহ নানা অভিঘাত মোকাবেলা করে সেই প্রমাণ আমরা রেখেছি।’
করোনা মহামারির মধ্যেই আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ সময়ই জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলেও অবহিত করেন। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর ২০০৬ সালে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ কোথায় ছিল আর আজ বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করছে তার তুলনামূলক চিত্রও জাতির সামনে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের এই সভাপতি।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস