একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি: সিপিডি
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:১৫ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১৩
ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং সত্যিকার অর্থে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, একমাত্র আশা, নীতিনির্ধারকরা এটি বুঝবেন এবং স্বীকার করবেন যে, গতানুগতিক পন্থায় কাজ হবে না। কেবল নিঃস্বার্থ শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংস্কারের কঠিন পথে যেতে পারে এবং অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে পারে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ধানমণ্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪: চলমান সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সরকার স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে জিম্মি উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই মহল আরও শক্তিশালী হয়েছে। শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক আনুকূল্যে সরকারি চাকরিতে প্রমোশন হয়ে থাকে। আর তাই সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচনের পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে না।
ফাহমিদা বলেন, নিয়ম-কানুনের অভাব নাই। অনেক ভালো নীতিমালা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না। পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ হয় না। যারা ঋণখেলাপির সঙ্গে জড়িত তারাই আবার নিয়ম করে দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যে, ঋণ রি-শিডিউল করা যাবে। এরকম বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিমালার বাস্তবায়ন দরকার।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, সংস্কার পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ কাজ হবে না। কারণ কায়েমি স্বার্থগোষ্ঠী শক্তিশালী এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, অর্থনীতি আগেও অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। বাংলাদেশ সেগুলো ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে। কিন্তু বর্তমানে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি একসঙ্গে এত চ্যালেঞ্জ আগে কখনো দেখেনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর যে চেষ্টা করা হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। এ কারণে আমাদের অর্থনীতিতে বেশ চাপ রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে অর্থনীতির চাপ ঘনীভূত হচ্ছে সেগুলো হলো- রাজস্ব আহরণের ধীর গতি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উর্ধ্বগতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া।
সিপিডির মতে, ব্যাংক ঋণ খেলাপি এবং যারা অবৈধ আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ যে আয় হচ্ছে, তা সরকার পরিচালনায় ব্যয় হচ্ছে। আর ঋণের টাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার কারণে অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে। রাজস্ব আহরণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি আরও উসকে দিচ্ছে সিন্ডিকেট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এমনকি নির্বাচনের পরেও না। নীতি নির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।
সারাবাংলা/জিএস/এনইউ