Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়নে বিদেশিদের ভূমিকা নেই’


২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪৩ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:০২

ছিলেন অর্থনীতির শিক্ষার্থী। তবে ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কর্মজীবন শুরু আমলা হিসেবে। পরে বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। সৌদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এসআইডিএফ) অর্থনৈতিক উপদেষ্টাও ছিলেন। ২০০৯ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হন আব্দুল মোমেন। তার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিলে তার সংসদীয় আসন সিলেট-১-এ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় আব্দুল মোমেনকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী হিসেবে মেয়াদের একদম শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন এ কে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি তিনি সারাবাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। মন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে সাফল্য ও ব্যর্থতা ছাড়াও কূটনীতি, জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের আগ্রহ, সিলেটের রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার নিউজরুম এডিটর আতিকুল ইসলাম ইমন। আজ থাকছে সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের মেয়াদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন— এমন প্রশ্ন রাখা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে। মন্ত্রী তার মেয়াদে বিভিন্ন দেশের মিশনগুলোতে তিনটি প্যাকেজ বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতি, জনকূটনীতি এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা— এই তিন প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিটি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে সেবা সহজ ও সুলভ করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি অন্য দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশকে আরও বেশি উজ্জ্বল রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

অর্থনৈতিক কূটনীতি

মন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর তিন শ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে দেশে। আগামীতে আমরা আরও কয়েক বিলিয়ন বিনিয়োগ পাচ্ছি। গত সপ্তাহে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আরও প্রায় ছয় শ কোটি ডলারের মতো পাব। অন্যান্য অনেক দেশও বিনিয়োগ করবে। আমাদের কূটনীতির প্রথম দিক হলো বিনিয়োগ বাড়ানো।’

‘দ্বিতীয়ত, আমরা চাই বাণিজ্য বাড়াতে, আমাদের রফতানি বাড়াতে। বিনিয়োগ বাড়লে রফতানিও বাড়বে। এই দুইয়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আছে, ইতিবাচক আন্তঃসম্পর্ক। আমরা রফতানির জন্য নতুন নতুন দেশ খুঁজছি। তবে আমরা রফতানির পরিধিও বাড়াতে চাই। আমরা এখন মোটামুটি শুধু তৈরি পোশাক বিক্রি করি। আমরা অন্য আরও পণ্য রফতানির তালিকায় যোগ করতে চাই। এখন প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় আমাদের। শুধু আমরা নই, অন্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই মিলেই এটা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো নতুন নতুন বাজার সন্ধান করেছি।’

বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির মূল বাজার দীর্ঘ দিন থেকেই ছিল মধ্যপ্রাচ্য। মন্ত্রী জানান, গত কয়েক বছরে প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাঠানো হচ্ছে গ্রিস, ইতালি, রোমানিয়া, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এ ধরনের প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তোলার উপযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিটি জেলাতেই গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ড. মোমেন বলেন, ‘গত বছর আমরা ১১ লাখের মতো বাংলাদেশি বিদেশি পাঠিয়েছি। এটি রেকর্ড। বিভিন্ন প্রচেষ্টার কারণে এটি বেড়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। সৌদি আরব, মালয়েশিয়ার বাজার একসময় বন্ধ ছিল। সেগুলা আমরা খুলেছি। এখন সবাই সব দেশে যাচ্ছে। কাতারের মতো জায়গায় আমরা কয়েক লাখ লোক পাঠিয়েছি।’

তবে প্রযুক্তির আত্মীকরণ ও ব্যবসা করার উপযোগী পরিবেশের (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) দিক থেকে বাংলাদেশে পিছিয়ে আছে বলে স্বীকার করে নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে জটিলতা আছে। গত কয়েক বছরের চেষ্টায় আমরা র‌্যাংকিংয়ে ১৭৮ থেকে ১৬৮-তে এসেছি। আমি চেয়েছিলাম এটা ডাবল ডিজিটে নিয়ে আসতে, কিন্তু পারিনি। এখানে আমার মর্ডার্ন টেকনোলজি লাগবে। রীতিনীতি, প্রক্রিয়া, পদ্ধতি— এগুলোর উন্নয়ন দরকার।’

‘আমার দেশে এখন বিনিয়োগ এলে কনজিউম হতে, ইমপ্লিমেন্ট হতে বহুদিন লাগে। আমি কয়েক বছর আগে একটা রিসার্চ করেছি, বাংলাদেশে যতগুলো ইনভেস্টমেন্ট প্রপোজাল আসে তার মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। খুবই দুঃখজনক। এখন অবস্থা একটু উন্নত হয়েছে। কিন্তু এখনো বিনিয়োগ আনতে কয়েক বছর সময় নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি আমাদের সহায়ক হতে পারে।’

বিদেশি মিশনগুলোতে বিভিন্ন সেবা সহজলভ্য করার প্রয়াসের কথাও তুলে ধরেন ড. মোমেন। বলেন, ‘সেবার মান বাড়াতে প্রত্যেক মিশনে হটলাইন সেবা চালু করেছি। প্রবাসীরা খুব প্রয়োজন পড়লে আমাদের ফোন দেয়, খেজুরে গল্প করার জন্য দেয় না। ফোন করার পর যদি আমার লোক ফোন না ধরে, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্য আমি মিশনগুলোকে বলেছি, পয়সা দিয়ে লোক রাখেন, প্রতিটি কল রিসিভ করবে। আমি এখানে অনেক ডিজিটাল মেকানিজম চালু করেছি। যেমন— মাই গভর্নমেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে অনেকগুলো সেবা আমরা প্রবাসীদের দিচ্ছি। নতুন প্যাকেজ চালু করেছি— দূতাবাস, এতে প্রায় ৩৫ ধরনের সেবা মানুষ ঘরে বসে পাচ্ছে। সব জায়গায় যে সফল হয়েছি, তা বলব না। কিন্তু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আমরা একটি মর্ডার্ন কনস্যুলার উইং খুলেছি। উদ্দেশ্য, ভালো সেবা দেওয়া। এগুলো হলো আমাদের ইকোনোমেকি ডিপ্লোম্যাসির প্যাকেজ।’

জনকূটনীতি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় প্যাকেজে পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি বা জনকূটনীতির ওপর জোর দিয়েছেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে আমরা অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছি। আমাদের দেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য, মানবাধিকারের জন্য ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। আর শেখ হাসিনা মা-বাবা, তিন ভাইসহ পরিবারের ১৭ জন সদস্য হারিয়েছেন। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে আর কোনো রাষ্ট্রনায়ক এত কিছু হারাননি। ছয় বছর দেশে ফিরতে পারেননি, দেশে এসেও কুখ্যাত ইনডেমনিটির কারণে ২১ বছর মা-বাবা হত্যার বিচারই চাইতে পারেননি। তার নিজের ওপরেও ১৯/২০ বার আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু এগুলো কেউ জানে না। আমি ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাফল্যগুলো জানানোর জন্য জনকূটনীতিতে বেছে নিয়েছি।’

মন্ত্রী জানান, জনকূটনীতির আওতায় প্রতিটি মিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার চালু করেছেন। কেবল বই-ছবি রাখা নয়, বঙ্গবন্ধু কর্নারের মাধ্যমে ওই দেশের মিডিয়া, থিংকট্যাংক, ইউনিভার্সিটিসহ সবার কাছে দেশের ইতিহার ও সাফল্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বা ব্র্যান্ড নেম ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিন হয়।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা এমন জাতি, আমাদের বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। এখন আমরা উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এখন ল্যান্ড অব অপরচুনিটি। এই তথ্যগুলো প্রচার করা দরকার, যেন আমার ব্র্যান্ড নেম চেঞ্জ হয়। আপনারা মিডিয়াও বাংলাদেশকে খারাপ দেখান। আমাকে বিদেশিরা প্রশ্ন করে, আপনার দেশে ভালো হোটেল আছে কি না? এর কারণটা হলো— আপনারা যখন বাংলাদেশকে দেখান, ভালো কিছু দেখান না। আপনারা এগুলো এমনভাবে চিত্রায়িত করেন, যেন সারা পৃথিবী মনে করে বাংলাদেশ এখনো দারিদ্র্যে জর্জরিত দেশ। আমাদের যে উন্নয়ন হয়েছে, সেই স্টোরি কাউকে বলেন না। আমি ঠিক এখানেই পরিবর্তন আনতে চেয়েছি, বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড নেম ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।’

আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা

আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে নিজের মেয়াদে মন্ত্রণালয়ের কূটনীতির তৃতীয় প্যাকেজ হিসেবে বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, যেসব দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আছে সে সব দেশে উন্নয়ন হয়। তরতর করে এগিয়ে যায়। ছোট গ্রাম সিঙ্গাপুর। তারা এত দরিদ্র ছিল যে মালয়েশিয়া তাদের বের করে দেয়, বলে যে তোমাদের দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। সেই সিঙ্গাপুর আজ কোথায়? আমরা আমাদের অঞ্চলে সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছি, যেন শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকে। বাংলাদেশ বিকামিং অ্যা হাব অব কানেক্টিভিটি।’

মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমাদের কিছু ভৌগলিক অবস্থানের জন্য অনেকের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বড়লোক দেশগুলো বলে, আপনারা এত উন্নয়ন করছেন, আমাদের কাছ থেকে জিনিস কেনেন। এখন সবাই এসে আমাদের নতুন নতুন অফার দেয়। আমরা কিছু কিছু কিনি। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গল যদি না হয়, আমরা সেই জিনিস কিনি না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে কিছু লোকের আমাদের ওপর নজর একটু বেশি। নজর এই জন্য যে অনেকের ইচ্ছা কোনো একটি দেশকে আটকানো। সে রাইজিং স্টার। আমাদের এই ইন্দো প্যাসিফিক যে রোড, সেখানে পৃথিবীর ৮৬ শতাংশ বাণিজ্য হয়। এটা যদি আটকানো যায়, তাহলে সেই দেশটি রসাতলে যাবে। সে জন্য আমাদের প্রতি নজর, এখানে কিছু একটা কিনারা করতে চায়।’

বাংলাদেশ ঘিরে এমন নানা ভূ-রাজনীতিক সমীকরণ থাকলেও জাতির পিতার ‘ফ্রেন্ডশিপ টুল অল, ম্যালাইস টু নান’ নীতিতে অটুট থাকার কথা বললেন পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন প্রতিবেশী। এ জন্য মিয়ানমারের মতো দেশ, যারা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের সুসম্পর্ক। আমরা এই নীতি নিয়ে এগুচ্ছি এবং আমরা এতে সফল। আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের নীতিগত অবস্থান জানিয়েছি। নীতির ভিত্তিতে কাজ করলে অনেকেই ক্ষণিকের জন্য রাগ হয়, কিন্তু পরে বলে যে এই দেশটি মহান দেশ। এই দেশটির নীতি আছে, নৈতিকতা আছে। বাংলাদেশের ভ্যালুজ আছে, প্রিন্সিপাল আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সফল দেশ।

পাঁচ বছর মেয়াদে অপ্রাপ্তি প্রসঙ্গেও জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। জবাবে বলেন, ‘আমাদের মিশনের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছিলাম। যেখানে আমাদের প্রবাসী আছে, রেমিট্যান্স পাঠায় এবং ওই দেশটি ভৌগলিকভাবে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা কেমন— এই তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে মিশন খুলতে চেয়েছিলাম। তখন মিশন ছিল ৫৮টি, এখন আছে ৮১টি। ১০০ পর্যন্ত পারিনি।’

মিশনগুলোতে ডিজিটাল বিভিন্ন সেবা সম্পূর্ণভাবে চালু না করার অপ্রাপ্তির কথাও জানালেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘এটা একা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়। যেমন— পাসপোর্ট পেতে এখনো অনেকের দেরি হয়, জটিলতা আছে। এটা শুধু আমাদের বিষয় না, অন্য মন্ত্রণালয়ও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।’

জনবল ঘাটতির কারণ অনেক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব না বলেও স্বীকার করলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আমার জনবল বাড়ানো দরকার। এ ক্ষেত্রে সিস্টেমও পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের দেশে একবার একটা পরীক্ষা (বিসিএস) দিয়ে আপনি সরকারি চাকরিতে ঢুকে গেলেন। আর আমার যে বিভিন্ন ছেলে-মেয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক্সপেরিয়েন্স, পাণ্ডিত্য অর্জন করেছে, তাদের আমি নিতে পারি না। কারণ ওই পরীক্ষা সে দেয়নি। আমার মনে হয় এই সিস্টেমে পরিবর্তন আনার এখনই সঠিক সময়।’

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি ৩৮ বছরের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। সেখানে যেকোনো চাকরির জন্য সরাসরি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আপনি যদি পুলিশ কমিশনার চান, মেয়র সাহেব একটা বিজ্ঞাপন দেন। যে ইচ্ছা আবেদন করতে পারে। সেখান থেকে তারা তিনজন বা পাঁচজন সিলেক্ট করেন। এর মধ্য থেকে তারা জনমত যাচাই করেন। ইংল্যান্ডে যদি কনস্যুল জেনারেলের প্রয়োজন হয়, তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। যেকোনো লোক আবেদন করতে পারে। যে কেউ চাকরি পেতে পারে। কিন্তু আমার এখানে সিনিয়রিটি দেখে নিয়োগ দিতে হয়। এর ফলে ডায়নামিজমের অভাব হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তাভাবনার সময় হয়েছে।’

সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে আগ্রহ দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। নির্বাচনের বছরে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ অনুভব করেছেন— জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রী শুরুতেই নির্বাচনে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক রাখার বিষয়ের সমালোচনা করেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা ১৯৯১ সালে একটা বাজে জিনিস অ্যাডপ্ট করেছিলাম— বিদেশি পর্যবেক্ষক। উন্নত দেশে এই সিস্টেম নেই। আমেরিকা বা ইংল্যান্ডে নেই। ভারতে আছে কি না, সন্দেহ। আমাদের দেশে এক ধরনের পরাধীনতার মনমানসিকতা থেকে বিদেশিদের সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রবণতা আছে। সেই প্রবণতায় আমরা ১৯৯১ সালে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আনি। আমাদের যদি আত্মবিশ্বাস থাকে, জনগণের ওপর যদি বিশ্বাস থাকে, তাহলে বিদেশি পর্যবেক্ষক লাগে না।’

বিদেশিদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশিরাও আমাদের দেশে মজা পেয়েছে। তারা আসে, মাতব্বরি করে। আর আপনারা মিডিয়াও তাদের যে গুরুত্ব দেন, তারা ভাবে তারা ভাইসরয়। বিদেশিরা আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় খুব একটা উন্নয়ন করেছে বলে আমার ধারণা নাই।’

সব দলের অংশগ্রহণ না হলে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশগুলো নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য মনে করবে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে আসা বা না আসা সেই দলের ব্যাপার। তাদের ডেকে নির্বাচনে আনতে পারব না। আফগানিস্তানে বড় নির্বাচন হলো, সেখানকার বড় দল তালেবানকে নির্বাচনে ডাকল না। আমেরিকা সেই নির্বাচন গ্রহণ করল। মিশরেও বড় দল ব্রাদারহুডকে নির্বাচনে আসতেই দেয়নি। মিয়ানমারের বড় এথনিক গ্রুপ রোহিঙ্গাদের ভোট দিতে দেয়নি। অং সাং সু চি সেই নির্বাচনে বিজয়ী হলেন। আমেরিকা বৈধতা দিলো। ফলে কোন দল নির্বাচনে আসলো বা না আসলো, সেটি বড় বিষয় নয়। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিলে সেটিই নির্বাচনের বড় গ্রহণযোগ্যতা।

ভোট পড়ার হারের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে বলেও মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, ‘আমেরিকায় বহু উপনির্বাচনে এক-দেড় পার্সেন্ট ভোট পড়ে। আলাবামা রাজ্যে একবার ৭২ শতাংশ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। আমি ম্যাসাসেটসে ছিলাম বহু বছর। সেখানে দুই সিনেটর। একজন ১৯৬২ সালে উপনির্বাচনে জয়ের পর উনাকে আর মাত্র একবার বোধহয় ভোট দিতে হয়েছে। কারণ উনার বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। ১৯৮৪ সালের পর আরেক সিনেটরের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায়নি। আরেকজন কংগ্রেসম্যান ছিলেন, তার বিরুদ্ধেও কেউ দাঁড়ায় না। এগুলা আমেরিকায় স্বাভাবিক। ওখানে ইলেকশনে ২৬ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। তাতেই আমরা গ্রহণযোগ্য বলি। আমার মনে হয় আমাদের যদি ৫০-৫৩ শতাংশ ভোট পড়ে, তাহলে মোর দ্যান এনাফ। এ বছরে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা, উত্তেজনা দেখছি। আমার ধারণা ভালো ভোট পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আড়াই শ বছরের গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু তাদের দেশের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয়েই মনে করে তাদের গণতন্ত্র দুর্বল। এর কারণ হচ্ছে তাদের দেশে নির্বাচন ওয়ালস্ট্রিট আর টাকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সে জন্য তারা মনে করে তাদের গণতন্ত্র দুর্বল।’

সারাবাংলা/আইই/টিআর

আতিকুল ইসলাম ইমন কূটনীতি ড. এ কে আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার সাক্ষাৎকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর