Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সৌদিতে খুন হওয়া ২ বাংলাদেশির পরিবার পেল ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:১২ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩৫

ঢাকা: একজনকে হত্যা করা হয় ২০০৬ সালে, আরেকজনকে ২০১৯ সালে। সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের দুই নাগরিকের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন, আরেকজন গৃহকর্তীর অত্যাচারে। দীর্ঘসময় বিচারকাজ শেষে হত্যা প্রমাণিত হওয়ার পর সম্প্রতি সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে দাম্মাম শহরে গুলিতে নিহত ব্যক্তির নাম সাগর পাটোয়ারি আর ২০১৯ সালে রিয়াদের আজিজিয়ায় গৃহকর্ত্রীর অত্যাচারে নিহত হয়েছিলেন মোসাম্মৎ আবিরুন বেগম।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবারকে দেওয়ার জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা আদায় করা হয়ছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারির মধ্যস্থতায় এই ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়।

ক্ষতিপূরণের টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কাছে শিগগির হস্তান্তর করা হবে। এই বোর্ড নিহতদের পরিবারকে খুঁজে বের করে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেবে।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

জানা যায়, ২০০৬ সালে দাম্মাম শহরে নিহত সাগর পাটোয়ারির পরিবারকে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল এবং ২০১৯ সালে রিয়াদে নিহত আবিরণের পরিবারকে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে।

সূত্র অনুযায়ী, কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন। দীর্ঘসময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলার অগ্রগতি হয়নি। আর ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমকল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারেন সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন।

থানা থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর প্রেক্ষিতে নিহত সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় তার পরিবারের ফোন নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে দূতাবাসের অনুকূলে পাওয়ার অব অ্যার্টনি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের দিক নির্দেশনায় শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।

বিজ্ঞাপন

বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। অভিযুক্তের পিতা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপস প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালে আপস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারির ওয়ারিশরা সম্মত হন।

আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক (নং-১৯৭৩৪৫৯৭) গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন এবং ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দাম্মামের সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখা মারফত দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।

আর খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী মোসাম্মৎ আবিরণ বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ায় নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানির হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যার ঘটনায় আজিজিয়া পুলিশ গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানী, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাদের ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেফতার করেন।

দীর্ঘ বিচারকাজ শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিচারক বেঞ্চ প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড দিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে আপিল আদালতের ৫ সদস্য বিশিষ্ট ফুল বেঞ্চ কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদের ক্ষমার সম্মতি দিয়ে রাষ্ট্রদূত বরাবর আবেদন করেন। সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লাখ সৌদি রিয়াল হলেও রাষ্ট্রদূতের প্রচেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮,৮০,০০০ সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয়।

অভিযুক্তের পরিবার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে কাউন্সেলর (শ্রম) রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীল এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বিচারক চলতি বছর ২০২৩ সালের ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে আপস অনুযায়ী নিহত মোসাম্মৎ আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশদের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮,৮০,০০০ সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন এবং সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাগর পাটোয়ারি এবং আবিরণ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায় হওয়াতে নিহতের পরিবার সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মরত সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

ক্ষতিপূরণ সৌদি আরব

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর