কোমর বেঁধে নেমেছেন ছালাম-মুজিব-গিয়াস
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৯ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কোমর বেঁধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত আলোচিত তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বহুল আলোচিত ‘কালুরঘাট সেতু’ এলাকা থেকে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন কর্ণফুলী তীরের আসন চট্টগ্রাম-৮-এর প্রার্থী আবদুচ ছালাম। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
আর বাঁশখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের প্রচারের প্রথম দিনেই বিপুল নেতাকর্মীর ঢল নামে। অন্যদিকে মীরসরাইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী মতবিনিময় সভা করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মাহবুব রহমান রুহেলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
আরও পড়ুন-
- নৌকা না পেয়ে হতাশ ২ ভাণ্ডারি
- নির্বাচনি সমঝোতার ‘বলি’ সালাম-নোমান
- সাইকেলে চড়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু হাছান মাহমুদের
- চট্টগ্রামে প্রচারণায় আওয়ামী লীগ-স্বতন্ত্র ‘সমানে সমান’
- চট্টগ্রামে বেশিরভাগ আসনে নৌকার সঙ্গে ঈগলের লড়াই
- নওফেলের প্রচারণায় ‘অদৃশ্য’ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাস্ত করার বার্তা
- হাঁটুনলা ভেঙে দেবো— মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ
এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর প্রতিশ্রুতি
প্রতীক বরাদ্দের পর সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় কালুরঘাট এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন আবদুচ ছালাম। এর আগে তিনি ওই আসনের কয়েকটি মাজার এবং মা-বাবার কবরে গিয়ে জিয়ারত করেন।
গণসংযোগে কেটলি প্রতীকের প্রার্থী আবদুচ ছালাম বলেন, ‘গ্রাম ও শহরের সমম্বয়ে আমার নির্বাচনি এলাকাটি একটি ব্যাতিক্রমী এলাকা। জনগণ মনে করেছে, গ্রাম ও শহরের মানুষের চাওয়া-পাওয়া আমি সহজেই ধারণ করতে পারব। কারণ আমার জন্মস্থান মোহরা কর্ণফুলী ও হালদা নদীবেষ্টিত একটি নিভৃত পল্লী ছিল। এ পল্লীতে আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। সময়ের পরিক্রমায় মোহরা ও চান্দগাঁও এখন পূর্ণাঙ্গ শহরে পরিণত।’
‘আমি চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ছিলাম। সেই ১০ বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে বোয়ালখালী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকার উন্নয়নে আমি কাজ করতে চাই। সবার দোয়া, সমর্থন ও মূল্যবান রায় নিয়ে সংসদে গিয়ে এলাকার প্রাণের দাবি কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়টি আমি জোরালোভাবে তুলে ধরব। এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু করার বিষয়ে আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব এবং ইনশল্লাহ আদায় করব। আমি গ্রাম ও শহরের ব্যাবধান কমিয়ে আনতে চাই। কর্ণফুলীর দুপাড়ের শহর ও গ্রামের মানুষকে এক সুতায় গাঁথতে চাই,’— বলেন সিডিএর সাবেক এই চেয়ারম্যান।
গণসংযোগ শেষে নগরীর সিঅ্যান্ডবি রাস্তার মোড়ে প্রধান নির্বাচনি কার্যালয় উদ্বোধন করেন ছালাম। এর আগে, সকালে আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
কর্ণফুলী নদীর তীরের বোয়ালখালী উপজেলা এবং নগরীর চান্দগাঁও-বায়েজিদ এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন। এ আসনে তিনবারের সাংসদ জাসদের মঈনউদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে দক্ষিণ জেলার সাবেক সভাপতি মোছলেম উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুতে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে সংসদে পৌঁছান নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এবারও এ আসনে মনোনয়ন দিয়ে নৌকার বহরে যুক্ত করা হয়েছিল তাকে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যাচাই-বাছাইয়েও টিকে যান। তবে সমঝোতার কারণে তাকে সরতে হয়েছে নির্বাচন থেকে।
এ আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে লড়বেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সোলায়মান আলম শেঠ। তবে প্রচার শুরুর প্রথম দিনে জাপা প্রার্থীর কোনো কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি।
আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এই ব্যবসায়ী। কিন্তু জোট রাজনীতির কারণে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল জাসদের মঈন উদ্দিন খান বাদলকে। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচন এবং দুই দফা উপনির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন আবদুচ ছালাম, যিনি ১০ বছর সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থিতা উন্মুক্তের সুযোগে তিনি নির্বাচনের মাঠে আসেন।
মুজিবের প্রচারণায় নেতাকর্মীর ঢল
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্তের সুযোগে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে এসেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দুবারের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ‘বিতর্কিত’ নানা কর্মকাণ্ডের কারণে দলের একাংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেই সমর্থন আদায় করে মাঠে নেমেছেন মুজিব।
ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমান সোমবার দুপুরে বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামে মা-বাবার কবর জিয়ারত করে ভোটের প্রচার শুরু করেন। সেখানে একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত কর্মিসভাতেও তিনি বক্তব্য দেন। এরপর চাম্বল, জলদী, গুণাগরী, সাধনপুর, পুকুরিয়ায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন। সভায় হাজারও নেতাকর্মীর ঢল নামে।
গণসংযোগে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার যে বার্তা, সেই বার্তা পেয়েই আমি নির্বাচনে এসেছি। কারও সঙ্গে আমার বৈরিতা নেই, প্রতিহিংসার সম্পর্ক নেই। সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ যেন পায়। আমি বাঁশখালীর সন্তান, এ জনপদের মানুষের সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। আমি বাঁশখালীকে উন্নয়নে-মর্যাদায় বদলে দিতে চাই। আমি জনগণের কাছে একবার সুযোগ চাই, যেন আমি তাদের ভাগ্য বদলে দিতে পারি। আমি ঈগল মার্কার ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে ভোটের প্রচার শুরুর দিনে এই আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সশরীরে ছিলেন না। তার মেয়ে মহিলা সমাবেশ ও গণসংযোগ করে নৌকার পক্ষে ভোট চান।
‘ড্রইংরুম থেকে আসিনি, রাজপথ থেকে এসেছি’
চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল। মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন দলের স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্তের ঘোষণার পর মাঠে নামেন। তিনি পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
১৯৭০ সাল থেকে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডেরও একজন। সাতবার সংসদ সদস্য এবং দুবার মন্ত্রী ছিলেন। ৮২ বছর বয়সী মোশাররফ সরে গিয়ে এবার নির্বাচনের মাঠ তুলে দিয়েছেন ছেলে রুহেলের হাতে। উচ্চশিক্ষিত রুহেল চলচ্চিত্র প্রযোজনা, সিনেপ্লেক্স ও হোটেল ব্যবসায় যুক্ত।
অন্যদিকে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আশির দশকের ছাত্রলীগ নেতা। পরে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেও সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৯ সালে তিনি মীরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। একসময় মোশাররফ ও গিয়াসের মধ্যে ‘গুরু-শিষ্যের’ সম্পর্ক থাকলেও ২০০৯ সালের পর তাতে ভাঙন ধরে। দলটির নেতাদের অনেকে মনে করেন, মোশাররফ ভবিষ্যতের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গিয়াসকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
নির্বাচনি প্রচার শুরুর প্রথম দিনে সোমবার রাতে নগরীর একটি রেস্তোঁরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন গিয়াস উদ্দিন। এ সময় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমি কাউকে অবজ্ঞা করি না, কাউকে অশ্রদ্ধা করি না। কিন্তু কেউ যেন আমার কর্মকাণ্ডেও বাধা না দেন। আসুন, আমরা সুস্থ, সুন্দরভাবে প্রতিযোগিতা করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হতে হবে। তারা অনেক কথা প্রচার করছেন, কিন্তু আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হব।’
‘আমি ড্রইংরুম থেকে আসিনি, রাজপথ থেকে এসেছি। রাজপথই আমার ঠিকানা। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে এসে আজকের অবস্থানে এসেছি। সুতরাং কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ হবে না। কাঁদা ছোড়াছুড়ি করেও লাভ হবে না। মীরসরাইয়ের জনগণ সব জানে, বুঝে। তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে দিন,’— বলেন স্বতন্ত্র এই প্রার্থী।
গিয়াস উদ্দিনের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট নিয়াজ মোর্শেদ এলিট সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে এলাকায় গিয়ে গিয়াস উদ্দিন নির্বাচনি প্রচার শুরু করবেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
আবদুচ ছালাম গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম-১ চট্টগ্রাম-১৬ চট্টগ্রাম-৮ জাতীয়-নির্বাচন টপ নিউজ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নির্বাচনি প্রচার মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেল মুজিবুর রহমান মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সংসদ নির্বাচন সোলায়মান আলম শেঠ স্বতন্ত্র প্রার্থী