‘ফলাফল কাগজে-কলমে লেখা আছে, ৭ তারিখে শুধু ঘোষণা’
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪০ | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৩
সাভার: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল কাগজে কলমে রাজধানীতে লিখে ফেলেছে। ৭ তারিখে শুধু ফলাফল সরকার ঘোষণা দেবে। কাজেই এটা কোনো নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ধোকা দেওয়া যাবে না।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
মঈন খান বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি তফসিল ঘোষণা করেছে। সেটা কোন নির্বাচন? যে নির্বাচনে তারা প্রকাশ্যে সব লজ্জা ভুলে গিয়ে দর কষাকষি করে সিট ভাগাভাগি করছে। এটার নাম তো গণতন্ত্র হতে পারে না। যদি সিট ভাগাভাগি করে সংসদ সদস্য নির্ধারিত হয় তাহলে তো এই নির্বাচন ইতোমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা কোন বিজয় উদযাপন করতে আসছি তা বর্তমান সরকারকে তুলে ধরতে হবে। এটা কিসের বিজয়, এটা কী এক দলীয় শাসনের বিজয়, নাকি একনায়কতন্ত্র শাসনের বিজয়? এখানে এমন একটি সরকার চলছে যারা মানুষকে কথা বলতে দেয় না, যারা মানুষকে ভোট দিতে দেয় না, যারা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ৫২ বছর আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের লাখ লাখ মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। একটি স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য। এই কারণে কী করেছিল? তারা যুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্রের জন্য, এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। এই কথা ভুলে গেলে চলবে না।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ এই দেশের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে এদেশে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। তারা চরম দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধংস করেছে। আজ স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে এই প্রশ্ন করতে হবে যে, আওয়ামী লীগ যদি দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তাহলে তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে যে, কেন তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশের একদলীয় স্বৈরাচারী সরকার কায়েম করেছে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। বিএনপি লগি বৈঠার রাজনীতি করে না। শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় এই দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। সেই কারণে রাজপথে আছি।
মঈন খান বলেন, মিথ্যা মামলা, হামলা এবং ভুয়া গায়েবি মামলা দিয়ে তারা বিগত ৬ সপ্তাহে আমাদের ২৩ হাজার লোককে কারারুদ্ধ করেছে। এসব ভুয়া মামলা দিয়ে আমাদের গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীদের কারারুদ্ধ করে এই দেশে তারা থাকতে পারবে না। এদেশের মানুষ তাদের বর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে তারা রাজনৈতিক মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আমাদের মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে তারা এক এগারোর ভুয়া মামলায় বিদেশে আটকে রেখেছে। তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। আজকে বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তারা জানে যে, এই দেশে কোনো রকমের ধোঁকাবাজি করে এই সরকার থাকতে পারবে না। আগামীতে ইনশাআল্লাহ আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে অপসারিত করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম দলের পক্ষ থেকে সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এ দেশের বারবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। এক দলীয় বাকশালের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরশাদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৯ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, আজকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আজ দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের নামে যে খেলা চলছে তার ফলাফল ঢাকায় বসে নির্ধারণ করা হচ্ছে। আগামী ৭ জানুয়ারি শুধু সেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এই যে নির্বাচনি খেলা, এই খেলা বন্ধ করার দাবি জানাই। আমরা দাবি জানাই জনগণ যেন এই খেলায় অংশ গ্রহণ না করে। আমরা অনুরোধ জানাই যারা এই নির্বাচনে সঙ্গে যুক্ত তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক বা মানবিক মূল্যবোধ থাকবে এবং তারা এই অন্যায়-অনাচারের সঙ্গে নিজেদের মুক্ত করবেন না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকের এই মহান দিনে যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, যারা দেশে বিদেশে এই মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন, সাহায্য করেছেন। তাদের এবং যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ফসল গণতন্ত্র, এই গণতন্ত্রকে বার বার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের আজকের দিনে আন্তরিক অভিনন্দন, শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাদের সবাইকে সাক্ষী রেখে এই মহান জাতীয় স্মৃতিসৌধকে সাক্ষী রেখে আমরা পরিষ্কার বলতে চাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে এ দেশে আরেকবার মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা আমরা করব ইনশাআল্লাহ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, রফিক সিকদারসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ