Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বাচ্চাদের অভিযোগ নেই— ড. জাফর ইকবাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৪১ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৪৫

ঢাকা: নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ নাই। শিশুরা আনন্দের সঙ্গেই এটিকে গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, আমি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে ঘুরেছি। সব জায়গাতেই দেখেছি শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে এটিকে নিয়েছে। আমরা কেউ জোর গলায় বলতে পারব না যে, আমাদের লেখাপড়া আনন্দের ছিল। কিন্তু এখনকার শিশুরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করার ফলেই নিজে নিজে শেখার চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও কনর্সানড উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট’র যৌথ উদ্যোগে ‘দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা আগের শিক্ষাক্রমে ছিল না। আগে যেসব অভিভাবকের প্রাইভেট পড়ানোর সক্ষমতা ছিল সেসব পরিবারের সন্তানরা বিজ্ঞান পড়ত। কিন্তু এখনকার শিক্ষাক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পাবে। এর আগে দেখা যেত শুধুমাত্র নাইন থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত চারবছর বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ ছিল। এখন আরও নিচু ক্লাস থেকেই শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান পড়ার সময় পাবে।’

তিনি বলেন, ‘গাইডবই ব্যবসায়ী, কোচিং সেন্টার সবাই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বিপক্ষে বলছে। কারণ, মুখস্ত বিদ্যা থাকলে তারাই লাভবান হবে। এমনকি অভিবাবকদের মধ্যেও মুখস্থবিদ্যা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেশি, যা শিক্ষার লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে।’

এ সময় তিনি গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, ‘নামি-দামি পত্রিকাগুলো শিক্ষাপাতায় বিশ্লেষণ বা গাইডেন্স না দিয়ে গাইডবই ছাপায়। তাই গণমাধ্যমের কাছ থেকেও সাহায্য পাওয়ার আশা করা যাবে না। এত সুন্দর একটা উদ্যোগ আমরা শুরু করেছি, নিয়ে যেতে হবে। বর্তমান শিক্ষানীতি নিয়ে আমি নিজে কনভিন্সড না হলে এর বিরুদ্ধেই বলতাম। বিএনপির সময়ে আমি আন্দোলন করে একমুখী শিক্ষা বন্ধ করেছিলাম। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না হলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও দরকার হলে আন্দোলন করতাম।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সভাপতি ও শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিবেশের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দূরদর্শী, সংবেদনশীল এবং সক্ষম নাগরিক প্রয়োজন। নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার উপযোগী প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিচ্ছিন্ন যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম ২০২২ উন্নয়ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের পরীক্ষামূলক সংস্করণ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা গতানুগতিকতা অতিক্রম করে বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী, সমতাপূর্ণ, যুগোপযোগী ও জীবনঘনিষ্ঠ হয়েছে। এবারের পাঠ্যপুস্তকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পরিচিতি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, দেশপ্রেমসহ সকল যোগ্যতার সন্নিবেশ ঘটেছে, যা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী, সংবেদনশীল, মুক্তমনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমতার মূল্যবোধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমদিকে অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা ছিল, সেটি দূর হচ্ছে। শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধমসহ বিভিন্ন মহলে গুজন ছড়ানো হচ্ছে, এই শিক্ষাক্রম বাতিলের জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে এটি বন্ধ হওয়া দরকার। অভিভাবকসহ সকলের মনে রাখা দরকার ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা ও পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে।’

সিডাব্লিউএফডি’র নির্বাহী পরিচালক লাডলী কে ফায়েজ বলেন, ‘এই শিক্ষাক্রম প্রণয়নে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ শিক্ষক, গবেষকদেরও যুক্ত করা হয়েছে। সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন এই পদ্ধতির সঙ্গে সবাইকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। সেটি না হলে বাংলাদেশ জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়বে।’

ইউএনএফপিএ’র বয়ঃসন্ধি ও যুববিষয়ক জাতীয় প্রোগ্রাম অফিসার ড. মনির হোসেন বলেন, ‘ইউএনএফপিএ শিক্ষক্রমকে যুগপোযোগী করে তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। বর্তমান শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমন কিছু বাধাও আছে, সেগুলো সংশোধনের সুযোগও আছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াটা যেমন জরুরি তেমনি শিক্ষকদের বা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সমস্যাগুলোও বিবেচনায় দরকার। ইউএনএফপিএ সেসব সমস্য দূরীকরণে সরকারের সাথে কাজ করতেও প্রস্তুত আছে।’

সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক রতন সিদ্দিক বলেন, ‘অতীতের কিছু ভুল পদ্ধতি এই শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে সংশোধন করা হয়েছে। জাতিকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এই শিক্ষাক্রমের বিকল্প নেই। বলা যায় এর মাধ্যমে আমরা শত বছরের শাপমুক্ত হয়েছি। এই পদ্ধতি গুণগতমান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। কিছু শিক্ষক, অভিভাবক এটিকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে, এই চেষ্টা প্রতিহতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অনেক। বিশাল একটা পরিবার হচ্ছে শিক্ষা পরিবার, এই পরিবারের সবাই যদি একযোগে কথা বলে তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। পাঠ্যপুস্তক কোনো অভিভাবকের জন্য তৈরি করা হয় না, এটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য। অভিভাবকদের কাজ সহায়তা করা। তারা ভুল বললে আমাদের দায়িত্ব ভুল সংশোধন করে দেওয়া।’

স্বাধীনতা শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়েছে, এই শিক্ষাক্রম সেটি বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখবে। এখন দরকার শিক্ষক শিক্ষর্থী ও অভিবাবকদের সমন্বয়ে কাজ করা। তবে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, স্কুলের অবকাঠামো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন এই শিক্ষাক্রম প্রণয়নে ভুমিকা রাখছে। সরকার ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষকদের ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষিত করে তুলেছে। ৮ম ও ৯ম শ্রেণির জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে। এমনকি শিক্ষকদেরও একাধিক বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা মেলার অয়োজন করা হবে, যা অভিভাবকদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিউিটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, ‘শিক্ষাক্রম কখনও অন্যের মডেল নিয়ে হয় না। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়। আগামী ২০ বছর পর অমরা ভবিষ্যৎ কে কোথায় দেখতে চাই তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। আজকের শিক্ষাক্রম ২০ বছর পরের জন্য। ওই যুগে তথাকথিত পেশাজীবী থাকবে না, নতুন ধরনের পেশাজীবি তৈরী হবে। বর্তমান শিক্ষাক্রম সেগুলোকে বিচেনায় নিয়েছে। উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে এই অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘এটাই প্রথম শিক্ষাক্রম যা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নিজ অর্থে, নিজেদের গবেষক ও তদারকিতে প্রণয়ন হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে মুখস্ত ও পরীক্ষা নির্ভরতা কমানো হয়েছে। সামগ্রিক পরিবর্তন প্রয়োজন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, সেটি না হলে আমরা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব।’

গোলটেবিল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক ড. রনজিৎ পোদ্দার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রীতম জাকির, অভিভাবক সানজিদা সুলতানা, শিক্ষক, নারী অধিকার কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

অভিযোগ ড. জাফর ইকবাল নতুন শিক্ষাক্রম বাচ্চা

বিজ্ঞাপন

বিপিএলের টিকিট মিলবে যেভাবে
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

হাল না ছাড়ার প্রত্যয় গার্দিওলার
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৫৪

আরো

সম্পর্কিত খবর