দোকানে লেখা ‘পেঁয়াজ নেই’, আড়তে মিলল ১৭০০ কেজি
১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:০৫ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো : দফায় দফায় অভিযান চালিয়েও চট্টগ্রামের পেঁয়াজের আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না প্রশাসন। এর ফলে ভারতের রফতানি বন্ধের ঘোষণার পর থেকে পেঁয়াজের বাজারে একেবারে প্রকাশ্যেই চলছে ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেটবাজি’।
দুদিন ধরে চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ আড়তদার পেঁয়াজ মজুতের পাশাপাশি পাইকারি বিক্রিও করেন। নগরীর পাহাড়তলী বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে এক দোকানে দেখা যায় ‘পেঁয়াজ নেই’ লেখা মূল্য তালিকা। কিন্তু ওই দোকানির আড়তে দেখা যায় ৩৬ বস্তায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ কেজি পেঁয়াজ।
আবার খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো ‘পেঁয়াজ শূন্য’ হয়েই আছে। দাম বাড়তি হওয়ায় রোববার (১০ ডিসেম্বর) খুচরা বিক্রেতাদের আনাগোনাও তেমন ছিল না এ বাজারে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার কবির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসন বলছে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে। আমরা কীভাবে বিক্রি করব? বর্ডার থেকে গাড়িভাড়া দিয়ে মাল আনতে খরচ হচ্ছে ১৮০ টাকা। লস দিয়ে কীভাবে বিক্রি করি, আবার জরিমানা করা হচ্ছে। আড়তে এমনিতেই পেঁয়াজ নেই। কারও কারও কাছে থাকলেও গতকাল জরিমানা করার পর তারা আর সেগুলো বিক্রি করছে না।’
পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল মাবুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক মাস ধরে পেঁয়াজে লস দিচ্ছি। ইন্ডিয়া থেকে যে দামে কিনেছি, ট্রান্সপোর্ট কস্টসহ হিসেব করলে যে দামে বিক্রি করছি, আমাদের লস হচ্ছে।’
শাহ মোহছেন আউলিয়া ট্রেডার্সের মালিক মো. ইব্রাহিম বাজারে প্রশাসনের অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘টাকা দিয়ে ব্যবসা করে চোর সাব্যস্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে? অবৈধ ব্যবসা তো করছি না। তারপরও যদি জরিমানা দিতে হয়, ব্যবসা করব না। মানুষও পেঁয়াজ পাবে না। পেঁয়াজ নেই, বেচব কোত্থেকে ? যা ছিল, বিক্রি হয়ে গেছে। আর কিছু আছে, সেগুলো রেখে দিয়েছে,পারলে বেচবে না হলে ফেলে দেবে। বিক্রি করতে গিয়ে হয়রানি হওয়ার তো দরকার নেই।’
অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। চট্টগ্রামে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। শনিবার খাতুনগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে পাইকারি বিক্রেতাদের ১২০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য করেন। কিন্তু একদিন পরই পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের আগের দামে ফিরে গেছেন।
এ অবস্থায় শনিবারের অভিযানের ধারাবাহিকতায় রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে খাতুনগঞ্জে অভিযানে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক। বাজার নিয়ন্ত্রণে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক সারাবাংলাকে জানান, খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজ যেমন কম, তেমনি দামও লাগাম ছেড়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান মূল্য তালিকা, কেনা-বেচার রশিদও সরিয়ে নিয়েছে। সেগুলো না পাওয়ায় মেসার্স মেহের আলী ট্রেডার্স এবং মেসার্স মোহাম্মদ আলি আহম্মদকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
‘আমরা জরিমানার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। অস্বাভাবিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও সরবরাহ কমার অজুহাতে মজুত করে দাম যাতে বাড়াতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’- বলেন উমর ফারুক
এদিকে পেঁয়াজের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে রোববার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী বাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ এতে নেতৃত্ব দেন।
পাহাড়তলী বাজারের মেসার্স বাছামিয়া সওদাগর নামে একটি দোকানে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা দেখেন ‘পেঁয়াজ নেই’ লেখা তালিকা। কিন্তু দোকানির কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তার আড়তে অভিযান চালানো হয়। এসময় সেখানে ৩৬ বস্তায় মজুত প্রায় ১ হাজার ৭০০ কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে মজুত রাখা পেঁয়াজ স্বাভাবিক দামে বিক্রির নির্দেশনা দেন কর্মকর্তারা।
এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মেসার্স কালু শাহ এন্টারপ্রাইজ নামে আরেকটি দোকানকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেউ কেউ দোকানের সামনে মূল্য তালিকায় লিখে রেখেছে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা, অথচ বিক্রি করছে ২১০ টাকায়। কেউ লিখে রেখেছে- পেঁয়াজ নেই। গুদামে গিয়ে পাওয়া গেল ১৭০০ কেজি। এভাবে বাজারে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/একে