Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেপজা ও শ্রম আইন সংশোধনীর তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে জানাবে বাংলাদেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:০৪ | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:০৮

ঢাকা: শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবন যাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি প্রেন্সিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম সই করেছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি খাতে তোলপাড় চলছে। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, এ নিয়ে দেশের পোশাক রফতানিতে প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও শ্রম আইন নিয়ে এখনও কিছু কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে এলাহী ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলমকে সঙ্গে রেখে সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন অধিকার নিয়ে আজ সভা করেছি। আমাদের কতটা অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামীতে আরও কি করতে হবে, তা নিয়েই আজ কথা বলেছি। ২০২৬ সালে যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে, সেক্ষেত্রে ইউরোপিয় ইউনিয়ন কিংবা অন্য দেশগুলো বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু অঙ্গীকার দেখতে চায়, সেগুলো বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করেছি।’

‘সম্প্রতি বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধনী করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০, সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনী আনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল। তাদের চাওয়াগুলো পূরণ করার জন্য এসব সংস্কার এনেছিলাম। গেল ১০ বছরে আমরা অনেক সংস্কার এনেছি। যে কারণে শ্রম আইনে তিনবার সংস্কার আনা হয়েছে। চারবার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা ভালো অবস্থানে আছি’, যোগ করেন সচিব।

বিজ্ঞাপন

আমাদের কোথায় কোথায় সমস্যা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘ধরেন, আমাদের বাণিজ্যে যারা বড় অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২৫ বিলিয়ন ডলার আমরা রফতানি করি শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আর যুক্তরাষ্ট্রে দশ বিলিয়ন ডলার রফতানি করলেও সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই না। বরং পৃথিবীর মধ্যে বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে রফতানি করছি। কিন্তু তাদের কিছু দাবি আছে। আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনগুলো অনুমোদন করেছি, সেই অনুযায়ী আমাদের শ্রম আইনে একটা ন্যূনতম থ্রেশহোল্ড আছে, একটি কারখানায় মোট শ্রমিকের ২০ ভাগ সদস্য যদি সংগঠন করতে চায়, তাহলে সেটা করতে পারবে। এটাকে ১০ শতাংশ করার দাবি তারা করেছিল, আমরা ১৫ শতাংশ করে দিয়েছি।’

তপন কান্তি ঘোষ আরও বলেন, ‘আর বেপজা আইনের ক্ষেত্রে সংগঠন করার অধিকার আছে কিন্তু আমরা সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন বলি না। আইনে সেটাকে বলা হয়েছে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, সেখানে তারা বলে যে ট্রেড ইউনিয়ন প্রবর্তন করত হবে। বিষয়টি প্রায়ই একই। এখনও সংগঠন হচ্ছে, তখনও সংগঠন হবে। কিন্তু নামটি যেন শ্রম সংগঠন হয়। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বেপজা আইন সংশোধন করা হবে। সংশোধনটা কীভাবে হবে, সেটা সব অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে। এখানে মোটাদাগে দুটি জিনিস তারা দাবি করেছে। তারা চাচ্ছে বেপজায় শ্রম সংগঠন করার অধিকার আর থ্রেশহোল্ডটা কমিয়ে আনা অর্থাৎ শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শ্রম অধিকার সংক্রান্ত সমঝোতায় যেসব ইস্যু ছিল, সেগুলো নিয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইউরোপিয় ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিকী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, সেটা কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ থেকে ১৬ নভেম্বর একটা উচ্চপর্যায়ের দল ঢাকায় এসে সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আর বাংলাদেশ যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলোর প্রশংসাও করেছেন। ইউরোপিয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ যেহেতু শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেহেতু তাদের চাওয়াগুলো আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের ৬০ শতাংশ রফতানি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়।’

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই জানিয়ে সচিব আরও বলেন, ‘কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, সব দেশের শ্রম পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে। আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের চলমান যে আলোচনা বলতে পারেন, থ্রি প্লাস ফাইভ অর্থাৎ পাঁচজন রাষ্ট্রদূত ও তিনজন সচিব মিলে যে একটা প্ল্যাটফর্ম আছে, সেই বৈঠকটা এই মাসে করার কথা। সে জন্যই আজ বসেছিলাম, এতকাল যে অগ্রগতি হয়েছে, তা কীভাবে জানানো যায়। আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল এই পাঁচ বছর মেয়াদী। সেক্ষেত্রে কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, কিছু বাস্তবায়ন হয়নি।’

বেপজা আইনের সংশোধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অংশীজন যারা আছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হবে কী করা হবে। এরইমধ্যে বেপজা আইনে অনেকগুলো সংশোধন আনা হয়েছে। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন, বিশেষ করে আইএলও আইনে ত্রিপক্ষীয়ভাবেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটাও সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষ মিলে ঠিক করবেন, কীভাবে করা হবে। বেপজার শ্রমিক কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনকে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি।‘

এসব সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হবে কিনা, জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘তাদের চাওয়াগুলো যে পূরণ হয়েছে, যেমন বেপজা আইনে সংস্কার করা হয়েছে, শ্রম আইনটিই বেপজার মতো প্রযোজ্য হবে, বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধন আনা হয়েছে, এই অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। এ জন্য কয়েকদিন লাগবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।’

সারাবাংলা/জেআর/এমও

টপ নিউজ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র শ্রম আইন সংশোধনী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর