নওফেল-বাচ্চু-নোমানের সঙ্গে আ.লীগ, লতিফ একা
৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৯ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীর চার আসনের মধ্যে নৌকা মনোনীত তিন প্রার্থীর সঙ্গে গিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু বন্দর-পতেঙ্গা আসনের প্রার্থী এম এ লতিফ তাদের সঙ্গে যাননি। তিনি নিজের অনুসারীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে নগর আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তোলার পর দৃশ্যত ‘একঘরে’ অবস্থা হলো লতিফের, যদিও তিনি স্থানীয়ভাবে দলের এ অবস্থানকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
নগরীর চারটি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া-চকবাজার) আসনে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এম এ লতিফ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কাযনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রার্থীদের সঙ্গে নগর কমিটির নেতারা গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ওই সভায় এম এ লতিফকে পরিবর্তনের দাবিও তোলা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১২ টা থেকে একে একে রিটার্নিং অফিসার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন নোমান, নওফেল ও বাচ্চু। সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি ইব্রাহিম চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, দফতর সম্পাদক সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, আইন সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক জালাল উদ্দিন ইকবাল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, উপ-প্রচার সম্পাদক শহিদুল আলম, উপ-দফতর সম্পাদক জহরলাল হাজারী।
প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচজন প্রবেশের নিয়ম আচরণ বিধিতে থাকলেও তিনজনের সঙ্গে অনেককেই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা যায়। রিটার্নিং অফিসারও এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করেননি।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনের যে প্রকল্প রয়েছে তা ত্বরান্বিত করতে কাজ করব। চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচার পেতে ঢাকায় উচ্চ আদালতে যেতে হয়। এতে সাধারণ জনগণকে অনেক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। তাদের হয়রানি লাঘবে উচ্চ আদালতে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে কাজ করব।’
সাংবাদিকদের ওপর বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের চড়াও হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ও আমার দলের পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের গণমাধ্যমকর্মীরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি-না সেটা জনগণের কাছে তুলে ধরছেন সাংবাদিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেউ যদি রূঢ় ব্যবহার করে, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে-এটি একটি গর্হিত কাজ হয়েছে। আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে গণমাধ্যমের ভাইদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’
আরেক প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের হরতালকে জনগণ প্রত্যাখান করেছে। সারাদেশের মানুষ এখন নির্বাচনের আমেজে আছে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক সেটা আমি চাই। আমি চাই সব দল নির্বাচনে আসুক।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার আসনে মনজুর আলম সাহেব দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমার মুরুব্বি। স্বতন্ত্র হোক বা অন্য দলের সবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দরকার।’
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে প্রায় হাজার নেতাকর্মীর বহর নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মনোনোয়ন ফরম জমা দিতে আসেন এম এ লতিফ। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগান দেন। এম এ লতিফের তৈরি করা ‘নারীশক্তি’ নামে একটি সংগঠনের কয়েকশ’ নারীকে একই পোশাকে এ সময় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে দেখা গেছে।
নির্বাচনি আচরণ বিধিমালায় কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় মিছিল বা কোনো প্রকার শোডাউন করতে পারবেন না বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া পাঁচজনের বেশি লোক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন না বলেও উল্লেখ আছে।
আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এম এ লতিফ বলেন, ‘আমার কোনো শোডাউন নেই। আমি সাধারণ মানুষ। যারা এসেছে এরা কর্মী, সমর্থক। আমার নির্বাচনি এলাকায় গত ১৫ বছরে কোনো ছবি ছিল না। আমি কোনো আইন ভঙ্গ করি না। আমার সঙ্গে কোনো পুলিশ, গ্যান ম্যান ছিল না। আমি আজ মনোনয়ন জমা দেব এজন্য মানুষ দেখতে এসেছে। আমি কোনো মিছিল নিয়ে আসিনি।’
লতিফ বলেন, ‘আমার প্রাণপ্রিয় দল, জাতির পিতার হাতে গড়া আওয়ামী লীগ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ ও নৌকাকে প্রতিহত করার শক্তি কারও নেই। আমার নির্বাচনি এলাকার মতো এত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের আর কোথাও হয়নি। বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল এসেও চট্টগ্রাম-১১ আসনে এম এ লতিফকে পরাজিত করতে পারবে না।’
মনোনোয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় এম এ লতিফের সঙ্গে কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাড়া তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখা যায়নি।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ সংসদ সদস্য হিসেবে আলোচিত এম এ লতিফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল নগর আওয়ামী লীগ। লতিফের মনোনয়ন পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ।
এম এ লতিফ বন্দর-পতেঙ্গা আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথমে এ আসনে নগর আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু পরে রাতারাতি সেই মনোনয়ন পাল্টে লতিফকে দেওয়া হয়।
কোনোদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করেও হঠাৎ লতিফের হাতে নৌকা দেখে নেতাকর্মীরা হতবাক হয়েছিলেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিল, লতিফ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৮ সালে জিতে আসার পর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবার এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের গুঞ্জন থাকলেও শেষপর্যন্ত লতিফের ওপরই আস্থা রেখেছে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম